নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনাকালে দীর্ঘ ছুটির কারণে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পরবর্তী শ্রেণির জন্য শিক্ষার্থীদের মৌলিক সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে (কোর কম্পিটেন্ট) আগামী বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বর্তমান (২০২০) শিক্ষাবর্ষ চালিয়ে নিতে চায় সরকার। আর সে কারণে মার্চ থেকে ২০২১ সালের নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু করার পরিকল্পনা হয়েছে।
করোনায় দীর্ঘ ছুটির এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে গত মে মাসের শুরুতে একটি বৈঠকে শিক্ষাবর্ষ আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর মৌখিক প্রস্তাব করেছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এদিকে সিলেবাস শেষ করা এবং পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের সুপারিশেও বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে এই সুপারিশই করা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী ক্লাসে উত্তরণের লক্ষ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে শিক্ষার্থীদের আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম (ক্লাস) চলবে। তবে জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে নতুন বই দেওয়া শুরু হবে। শিক্ষার্থীরা পরবর্তী শ্রেণির বই পাওয়ার পরও আগের শ্রেণির নির্ধারিত সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করবে। এরপর মার্চ মাস থেকে শুরু হবে নতুন শিক্ষাবর্ষ। ২০২১ সালে ৩০ দিন ছুটি কমিয়ে শিক্ষাবর্ষ শেষ করা যাবে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সিলেবাস তৈরিও করা যাবে।
গত মে মাসের বৈঠকে এনসিটিবির সুপারিশে বলা হয়, আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হলে দীর্ঘ এই ছুটিতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এই প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি শিক্ষাবর্ষ বাড়লে ২০২১ সালে ছুটি কমিয়ে শিক্ষাবর্ষের সময় ঠিক রাখা যাবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা যে সুপারিশ করেছেন, তা এ সপ্তাহে চূড়ান্ত হবে। এরপর তা প্রকাশ করা হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা ও শিক্ষা জীবন সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক রাখতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো।’
জানুয়ারির ১ তারিখে বই দেওয়া হবে নিশ্চিত করে সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, বিশেষজ্ঞদের কয়েকটি প্রস্তাবের মধ্যে পরবর্তী শ্রেণির জন্য শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে তুলতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী পুরনো বই পড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে।
মাহবুব হোসেন বলেন, ‘পরবর্তী শ্রেণির জন্য যোগ্যতা অর্জনের বিষয়টি না ভেবে পরীক্ষার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা আমাদের মধ্যে বেশি। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আমরা চাই, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষাজীবন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা। ’
এর আগে এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাবর্ষ করার মৌখিক প্রস্তাব করা হয়েছিল একটি বৈঠকে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাবর্ষ করা হলে মার্চ থেকে ২০২১ সেশন শুরু করা হবে। আগামী শিক্ষাবর্ষে ছুটি কমিয়ে দিলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে না।’ ওই বৈঠকে বিকল্প প্রস্তাবও উঠেছিল বলে জানান এনসিটিবি চেয়ারম্যান।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাখতে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত ১৭ মার্চ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি ভালোর দিকে গড়ালে আগামী সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার টার্গেট রয়েছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। এই পরিস্থিতিতে সেশন জট যাতে সৃষ্টি না হয়, সে জন্যই বিকল্প পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।