এম মাহামুদুল হাসান: করোনা পরিস্থিতিতে চলতি ২০২০ শিক্ষাবর্ষ দীর্ঘ না করে এ বছরের মধ্যেই ছাত্র-ছাত্রীদের শ্রেণিভিত্তিক লেখাপড়া শেষ করানোর চিন্তা-ভাবনা চলছে। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া সম্ভব হলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর ডিসেম্বরের মধ্যে তা সম্ভব না হলে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে ‘অটো পাস’ দিয়ে তুলে দেওয়া হবে। এই উভয় ক্ষেত্রেই পাঠ্যবই বা সিলেবাসের যে অংশটুকু পড়ানো সম্ভব হবে না, তার অত্যাবশ্যকীয় পাঠ পরের শ্রেণিতে দেওয়া হবে।
এ ধরনেরই নানা ‘বিকল্প’ মাথায় রেখে এগোচ্ছে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনার প্রথম ধাপেই চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে চলতি শিক্ষাবর্ষের পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির বড় দুই পাবলিক পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত। এ স্তরের শিক্ষার্থীদের এবার সম্ভব হলে বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে পাস করানোর চিন্তা-ভাবনা চলছে। তবে এটি প্রায় নিশ্চিত যে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (ইইসি) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা এবার হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমাপনী পরীক্ষা না হলেও এই দুই স্তরের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। এই পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে মেধাবৃত্তি দেওয়া এবং এজন্য জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ‘কারিকুলাম ম্যাপিং’ করে দেবে।
এসব বিষয়ে বুধবার (১২ আগস্ট) এনসিটিবিতে কারিকুলাম বিশেষজ্ঞদের বৈঠক শুরু হচ্ছে। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরেই সার্বিক শিক্ষা পরিকল্পনা নিয়ে ময়মনসিংহে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিতে (নেপ) বিশেষজ্ঞদের বৈঠক চলছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ডিসেম্বর মাসে শ্রেণি কার্যক্রম সমাপ্তির লক্ষ্য ধরে কারিকুলাম ও সিলেবাস মূল্যায়নের কাজ করছে নেপ। এজন্য তাদের দুটি পরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হয়েছে। একটিতে ১ সেপ্টেম্বর ক্লাস কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্য ধরা হবে। আরেকটিতে ১ অক্টোবর থেকে কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা থাকবে।
জানা গেছে, পরিকল্পনা-১ অনুসারে ১ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীরা মাত্র ৬৬ দিন পাচ্ছে। আর ১ অক্টোবর থেকে স্বাভাবিকভাবে ৫২ দিন কর্মদিবস থাকে। তবে পরিকল্পনা দুটি বাস্তবায়নে শীতকালীন দশদিনের ছুটি বাতিল বা কমানোর সুপারিশও আছে।
অন্যদিকে পিইসি ও ইইসি, এবং জেএসসি ও জেডিসি বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রাথমিকভাবে হয়েই আছে। গত সপ্তাহে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউসের উপস্থিতিতে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ভিত্তিতে উভয় মন্ত্রণালয় পৃথক দুটি সারসংক্ষেপ তৈরি করে আগামী রোববারের (১৬ আগস্ট) মধ্যে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাতে পারে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘করোনা ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না। পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হবে, তখনই কেবল তারা স্কুলে যাবে। যেহেতু কবে প্রতিষ্ঠান খোলা যাবে, তা আমরা জানি না। তাই একাধিক বিকল্প হাতে রেখে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা তৈরির কাজ চলছে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে শিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণে বিশেষ করে সামনে কোনো মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, সে সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাব আমরা পেয়েছি। মতামতকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এ নিয়ে এনসিটিবি কাজ করবে।’
করোনা সংকটে গত ১৭ মার্চ থেকে সব স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। সর্বশেষ নির্দেশনায় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছে। ফলে ওইদিন পর্যন্ত শিক্ষাবর্ষের ৮৮টি কর্মদিবস নষ্ট হতে যাচ্ছে। এর আগে ১৬ মার্চ পর্যন্ত মাত্র ৪১টি কর্মদিবস পেয়েছিল শিক্ষার্থীরা। সরকার টেলিভিশনে দূরশিক্ষণ কার্যক্রম হাতে নিলেও সেটা সকলের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
সান নিউজ/ এআর