সান নিউজ ডেস্ক : শিশু, কিশোর ও যুবদের মাদক, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিষবাষ্প থেকে নিরাপদ ও দূরে রাখতে স্কাউটিংয়ের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
আরও পড়ুন : স্কাউটদের কলকাকলিতে মুখরিত মৌচাক
তিনি আরও বলেন, স্কাউটিং কার্যক্রমই পারে নতুন প্রজন্মকে নৈতিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক প্রগতিশীল, সৃজনশীল উন্নয়নের রাজপথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে দেশকে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়তে।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) রাত সোয়া ৮টার দিকে গাজীপুর জেলার মৌচাক জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৩২তম এশিয়া প্যাসিফিক ও একাদশ স্কাউট জাম্বুরি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ স্কাউটস আন্দোলনকে জোরদার করতে শিক্ষামন্ত্রাণালয়ের আওতায় বর্তমানে ৩টি প্রকল্প চলমান আছে বলেও জানান ডা. দীপু মনি।
আরও পড়ুন : স্কাউটদের ঘর গোছানোই এক শিল্পকর্ম
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ স্কাউটিং সম্পসারণ ও স্কাউটস শতাব্দী ভবন নির্মাণ প্রকল্প চলছে। ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট অঞ্চল ও মৌলভীবাজার জেলায় স্কাউটস ভবন নির্মাণ প্রকল্প এবং ৪৮ কোটি টাকা আঞ্চলিক স্কাউটস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হবে।
তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২টি করে ক্রাব স্কাউট ও রোবট স্কাউট দল খোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি ও জাম্বুরী উপদেষ্টা আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক প্রমুখ।
আরও পড়ুন : স্কাউট দলগুলো বেছে নিয়েছে তাঁবু
প্রসঙ্গত, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ‘সাবাস- শক্তির ফোয়ারা’ এই প্রতিপাদ্যে শুরু হয়েছে ৯দিন ব্যাপী ৩২ তম এশিয়া প্যাসিফিক আঞ্চলিক স্কাউট ও একাদশ জাতীয় স্কাউট জাম্বুরি-২০২৩।
স্কাউটদের কলকাকলিতে মুখরিত মৌচাক :
গত বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) ভোর থেকে পাখির কলকাকলির আওয়াজের মত দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে স্কাউট দলগুলো আসতে শুরু করে।
দীর্ঘ সময় ও পথ পাড়ি দিয়ে পৌছানোয় মুখে ক্লান্তির চিহ্ন থাকলেও ক্যাম্পের পরিবেশ, স্থানীয় প্রাকৃতির বৈচিত্রময় পরিবেশ ও অপরুপ সৌন্দর্য্য এবং হাজার হাজার স্কাউটের সমাবেশ সব ক্লান্তি ও বিষণ্নতা দূর করে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন : রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় শিক্ষার্থী নিহত
নবচেতনায় হাতে ও কাঁধে ব্যাগ, বাঁশ, লাঠিসোঁটাসহ বাসস্থান তৈরীর নানা সরঞ্জামাদি নিয়ে ছুটছে তাঁবুর দিকে।
আয়োজক বাংলাদেশসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল ভুক্ত দেশ থেকে ৮ হাজার স্কাউট সদস্য, ১ হাজার ইউনিট লিডার ও আইএসটি সদস্যসহ প্রায় ১১ হাজার জন স্কাউট সদস্য এই জাম্বুরিতে অংশগ্রহণ করছে। ৯ দিন ব্যাপী এই ক্যাম্প ১৯ জানুয়ারি শুরু হয়ে আগামী ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
এবারের স্কাউট জাম্বুরিকে মোট ৪ টি ভিলেজে ভাগ করা হয়েছে এবং প্রতিটি ভিলেজে দুটি করে মোট ৮ টি সাব ক্যাম্পে বিভক্ত করা হয়েছে।
নয়দিন ব্যাপী এ জাম্বুরিতে স্কাউটদের জন্য থাকছে তাঁবুকলা, হাইকিংনাইট হাইকিং ও ইয়ুথ ভয়েজ, নেইবারহুড, ক্যাম্প ফায়ার, খেলাধূলা ও মেধা যাচাইসহ মোট ২০ টি চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুন : আইডিএ বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে সস্তা ঋণ
জাম্বুরিতে অংশগ্রহণকারী স্কাউটরা এসব চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণ করে তাদের মেধা, শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, আধ্যাত্মিক বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হবে।
এই ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী দেশী ও বিদেশি স্কাউটরা বাংলাদেশও জাতীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মৌচাকের প্রায় ১৮১ একরের এই অপার সৌন্দর্য্যে ভরা প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে তাদের মন জুড়িয়ে যাবে। এখানকার বনাঞ্চল, নানা প্রজাতির উদ্ভিদ, পাখপাখালির কিচিরমিচির শব্দ, সুন্দর পাড়সহ পুকুর এবং আরও অন্যান্য প্রাকৃতিক পরিবেশ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গাজীপুরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, টাকশাল, ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান, ৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, হাইটেক পার্ক,ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি এসবের বিষয়ে জেনে ও বাস্তব জীবনে অবলোকন করে অংশগ্রহণকারী স্কাউটেরা তাদের পঞ্চইন্দ্রিয়কে আরও সমৃদ্ধ করতে পারবে।
আরও পড়ুন : নিষেধাজ্ঞা আছে এমন জাহাজ চাই না
পাশাপাশি এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে স্কাউটরা বাংলাদেশকে জানতে পারবে এবং তাদের মধ্যে ভ্রমন পিয়াসা জন্মাবে।
এদিকে জাম্বুরির প্রথম দিনে অংশগ্রহণকারী স্কাউট দলগুলো তাদের তাঁবু বেছে নিয়েছেন। তাঁবু নির্ধারণের পর তাকে সবার চেয়ে আকর্ষণীয় ও সুন্দর করার মহাযজ্ঞ শুরু হয়।
যেমন প্রতিদিন সকালে ধারাবাহিক ভাবে তাঁবু পরিদর্শনের অংশ হিসেবে নিজ তাঁবু বা গৃহকে শৈল্পিক রুপ দিতে ভোরের ঘন কুয়াশাকে উপেক্ষা করে চলে শিল্পকর্ম।
রাজধানী ঢাকার পাশ্ববর্তী গাজীপুর জেলার মৌচাকে রয়েছে প্রকৃতির এক বিশাল সমাবেশ। যেখানে প্রকৃতি থেকে স্কাউটিং কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় অসংখ্য সরঞ্জাম পাওয়া যায়। তাই স্থানীয় ভাবে তারা নিজস্ব তাঁবুকে সবার চেয়ে ভিন্ন রুপ দিতে আকর্ষণীয় ও সুন্দর করতে বিভিন্ন অবকাঠামো সংগ্রহের জন্য বের হয়।
আরও পড়ুন : ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন
সংগৃহীত প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি দিয়ে তাঁরা তাঁবুর বিভিন্ন গ্যাজেট, চুলা, পানি পয়ঃনিষ্কাশনের ড্রেন, এরিনা, গেইট, পুকুর তৈরি করছে।
এছাড়াও নিজস্ব তাঁবুকে রঙিন সাজে সজ্জিত করতে অনেকেই রঙ বেরঙের কাগজ দিয়ে ফুলদানি, গেইট, এরিনার রশি, গ্যাজেট সাজাচ্ছে।
দেখা যায় অনেকেই তাঁবুর সামনের আঙিনায় মাটি সমান করে পানি ছিটিয়ে বসবাস উপযোগী করছে। তারপর তৈরী করে চলেছে নানা রঙের সুন্দর সুন্দর বিভিন্ন গ্যাজেট। যা দেখলে মনে হয় পুরো জাম্বুরিতে যেন তাঁবু বর্ণিল করে সজ্জিত করার এক অঘোষিত প্রতিযোগিতা চলছে।
এছাড়াও ভোরে ব্যায়াম, প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক তৈরী, প্রতিবন্ধকতামূলক প্রতিযোগীতায় সমান তালে অংশগ্রহন করেছে।
বিশ্ব ইজতেমা, প্রধানমন্ত্রীর স্কাউটস কর্মসূচি স্থগিত :
বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে শনিবার (২১ জানুয়ারি) গাজীপুরের জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৩২তম এশিয়া-প্যাসিফিক এবং ১১তম জাতীয় স্কাউট জাম্বুরির পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি স্থগিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার জানিয়েছেন, বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে গাজীপুরে বাংলাদেশ স্কাউটসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : ডিসি সম্মেলন মঙ্গলবার শুরু
শনিবার গাজীপুর জেলার মৌচাক জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৩২তম এশিয়া-প্যাসিফিক এবং ১১তম জাতীয় স্কাউট জাম্বুরিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ দেওয়ার কর্মসূচি ছিল।
রাজধানী ঢাকা সংলগ্ন টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুক্রবার ভোরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মুসল্লির অংশগ্রহণে ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার ৫৬তম আসরের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে।
গত ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি একই স্থানে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা বাসস।
১১তম জাতীয় স্কাউট জাম্বুরি শুরু, প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন :
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) গাজীপুর জেলার মৌচাকে জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠেয় ‘৩২তম এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল এবং ১১তম জাতীয় স্কাউট জাম্বুরি’তে অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন : ৫১ পুলিশ কর্মকর্তা পেলেন পদোন্নতি
‘৩২তম এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল এবং ১১তম জাতীয় স্কাউট জাম্বুরি’ বৃহস্পতিবার শুরু হয়ে শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) পর্যন্ত চলবে।
এ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেছেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, বাংলাদেশ স্কাউটস ৩২তম এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক স্কাউট জাম্বুরি এবং ১১তম জাতীয় স্কাউট জাম্বুরি আয়োজন করছে।
শিশু-কিশোরদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্কাউট আন্দোলন কয়েক শতাব্দী ধরে বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের শিশু ও যুবকদের আত্মনির্ভরশীল, জনহিতৈষী ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্কাউট আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশে প্রথম এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্কাউট জাম্বুরি :
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক স্কাউট জাম্বুরি প্রথমবারের মতো আয়োজন করছে বাংলাদেশ। গাজীপুর জেলার মৌচাকে বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৯ দিনব্যাপী এই জাম্বুরি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ফিলিপাইনের আপিল
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ স্কাউটস। জাম্বুরি আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
জাম্বুরি হচ্ছে স্কাউট সদস্যদের মিলনমেলা। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অংশগ্রহণে প্রতি চার বছর পরপর এই আয়োজন করা হয়ে থাকে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৪ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ফিলিপাইনে প্রথম এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্কাউট জাম্বুরি অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ব স্কাউট সংস্থার ১০৫তম সদস্য বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে বর্তমানে স্কাউটসের সদস্য সংখ্যা ২২ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি। সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশ স্কাউটসের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম।
সান নিউজ/এইচএন