মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বেতকা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে চলছে কোচিং বাণিজ্য। প্রতিদিন সকাল ৮টা হতে শুরু হয়ে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে এই কোচিং বাণিজ্য। কোচিং বাণিজ্য'কে গত জুন মাস হতে বাধ্যতামূলক করা হলে পরে বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের চাপের মুখে পিছু হটে শিক্ষকরা।
এখন বিভিন্ন কৌশলে ছাত্র-ছাত্রীদের কোচিং করতে বাধ্য করা হচ্ছে। যার কারণে ওই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী কোচিং করতে বাধ্য হচ্ছে। এক হাজারের অধিক ছাত্র-ছাত্রীকে সপ্তাহে ৩ দিন করে কোচিং করানো হচ্ছে। ২ বিষয়ে পড়িয়ে মাসে নেওয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুত্রে জানা গেছে, রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার ছাত্রীদের এবং সোম, বুধ ও বৃহস্পতিবার ছাত্রদের কোচিং করানো হয়। ভুক্তভোগী ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ রবি থেকে বুধবার ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদাভাবে এবং বৃহস্পতিবার সকল ছাত্র-ছাত্রীদের একসাথে বসিয়ে এ কোচিং করাচ্ছেন শিক্ষকরা।
বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষকদের প্রাধান্য দিয়ে কোচিং আয়ের মুস্টিমেয় অংশ কোচিং ক্লাস না করিয়েই হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক বলে সংশ্লিস্ট সুত্রে জানাগেছে।
সরোজমিনে, সকাল ৯ টার দিকে বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেনি পর্যন্ত ছাত্রীদের ৮ টি রুমে ১২ জন শিক্ষক কোচিং করাচ্ছেন। এতে প্রায় ৪০০ ছাত্রী কোচিংয়ে অংশগ্রহণ করছেন। দিনটি শুধু ছাত্রীরাই কোচিং নিচ্ছেন। বিদ্যালয়ের গেটের বাহিরে, প্রবেশের অপেক্ষায় ভিড় জমিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ছাত্ররা। এতে খোলা থাকলেও কোচিং চলায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারছেন না কোমলমতি ছাত্ররা?
বিদ্যালয়ের ৪ জন খন্ডকালীন শিক্ষক শফিকুল ইসলাম, মহিউদ্দিন মাহিন, খাইরুল ইসলাম ও জিহাদ হাসান এর সাথে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, খন্ডকালীন শিক্ষকদের চাহিদা কম থাকায় তাদের নামে মাত্র কোচিং ফি দিয়ে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন আল মামুন ও সহকারি শিক্ষক মো.সেলিম মিয়া কোচিং করাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। কোচিং হতে আয়ের টাকা ক্লাস না করেই প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক নিচ্ছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়।
বিদ্যালয়ের ছাত্র সোহান বলেন, আমরা সপ্তাহে ৩ দিন কোচিং করি। আমাদের কাছ থেকে মাসে ৬০০ টাকা করে নেয় শিক্ষকরা। ছাত্র নিরব বলেন, স্কুলে কোচিং বাধ্যতামূলক। না করলে অভিভাবকদের ডাকায় স্যারেরা। একদিন ছেলেরা কোচিং করে একদিন মেয়েরা । আমাদের সোমবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার কোচিং করায় শিক্ষকরা।
ছাত্রী রেদোয়ানা বলেন, আমাদের সপ্তাহে ৩ দিন ২ বিষয়ে পড়ায় শিক্ষকরা। এতে মাসে ৬০০ টাকা নেয় শিক্ষকরা। ছাত্রী সায়মা বলেন, আমাদের স্কূলের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের কোচিং করতে হয়। দুই বিষয়ে পড়ায় শিক্ষকরা তিন দিন করে সপ্তাহে পড়ায়ে মাসে ৬০০ করে টাকা নেয়। এছাড়াও একাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারাও জানান অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়।
বেতকা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক সেলিম হোসেন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ১০৩৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সকল ছাত্র-ছাত্রী কোচিং করে না। ২টি বিষয়ে কোচিং করিয়ে মাসে ৬০০ টাকা নেওয়া হলেও যারা কোচিং করে তাদের মধ্যে অনেকে টাকা দেয় না। আবার অনেকে দিলেও অর্ধেক দেয়।
এ ব্যাপারে বেতকা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন আল-মামুন বলেন, করোনাকালিন সময়ে বাচ্চারা ঠিকমতো ক্লাস করতে পারছিল না। তাদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কোচিং ব্যবস্থা করেছিলাম। এখন তেমন সাড়া পাচ্ছি না। ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মতেই কোচিং চালু করা হয়েছিল। তবে মনে হয়, আর চালাতে পারবো না।
এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন শিকদারের মুঠোফোনে ফোন করে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে জানাগেছে ওনি দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন। এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটি সদস্য জনি শিকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করার ইচ্ছে প্রকাশ করেনি।
টঙ্গীবাড়ি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খালেদা পারভীন বলেন, সরকারী বিধি-বিধান মেনে প্রতি বিষয়ে ১৫০ টাকা করে নিয়ে কোচিং করানো যাবে। তারা যদি বেশি নেয় এবং কোন নিয়ম অনুযায়ী কোচিং করাচ্ছে, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া গ্রহন করা হবে।
সান নিউজ/এনকে