মিরাজ উদ্দিন: পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী কবি নজরুল সরকারি কলেজ আজ ১৪৮ বছরে পদার্পণ করেছে। ১৮৭৪ সালের ১৬ই মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় এই প্রতিষ্ঠানটি। চার চার বার নাম পরিবর্তন হয়ে আজকে কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ঢাকা।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ল
তথ্য সূত্রে জানা, লেফটেন্যান্ট গর্ভনর স্যার জর্জ ক্যাম্বেল এর আমলে মাদ্রাসা রিফমর্স কমিটির অনুমোদনে মোহসীন ফাউন্ডেশনের টাকায় ১৮৭৪ সালে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার মডেলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীতে তিনটি নতুন মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়। হাজ্বী মোহাম্মদ মহসীনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মাদ্রাসা গুলোর নাম দেওয়া হয় মহসিনিয়া মাদ্রাসা। কিন্তু ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা বহুল পরিচিত লাভ করে ঢাকা মাদ্রাসা নামে।
বৃটিশ শাসনামলে বাংলাদেশে এইগুলা ছিল মুসলমানদের জন্য করা প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯১৫ সালের ১৬ নভেম্বর এক সরকারি আদেশে মাদ্রাসার ব্যয়ভার বহন করার দায়িত্ব নেয় বাংলার সরকার। ১৮৮০ সালে মুসলিম স্থাপিত্যরীতি অনুযায়ী মাদ্রাসা ভবন তৈরি করা হয়। মাদ্রাসায় ৭টি শ্রেণি ছিল। আরবি বিভাগে শুধু আরবি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতো। আর ইংরেজি বিভাগে (পরবর্তীতে এ্যাংলো পারসিয়ান বিভাগ) ইংরেজি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতো।
জানা যায়, ১৮৮৩ খ্রিঃ মধ্যে মাদ্রাসার ৩৩৮জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০২জনই ছিল এ্যাংলো পারসিয়ান বিভাগের। ১৯১৫ সালে সরকার অন্যন্যা মাদ্রাসার মতো নিউ স্কিম পদ্ধতি শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর পেক্ষিতে ঢাকা মাদ্রাসা হাই মাদ্রাসা রুপান্তর করা হয়। এরপর এ্যাংলো পারসিয়ান বিভাগ আলাদা হয়ে ঢাকা গভঃ মুসলিম হাই স্কুল হয় ১৯১৬সালে।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার টাকা খেয়েছেন বাইডেন
ঢাকা মাদ্রাসা এতটাই জনপ্রিয়তা ছিল যে দূরদূরান্তের মুসলিম শিক্ষার্থীদের একমাত্র লক্ষ ছিল ঢাকা মাদ্রাসা। ১৯২১সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় ১৯২৩ সালে ঢাকা মাদ্রাসাকে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে রুপান্তর করা হয়।
১৯৫৮ সালের জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশে ১৯৬২ সালে মাদ্রাসা তুলে দিয়ে মাদ্রাসার স্কুলগুলোকে মাধ্যমিক ক্লাসে পরিনত করা হয়, এবং ঢাকা মাদ্রাসা পরিচিত লাভ করে ইসলামিয়া ইন্টারমিডিয়েট কলেজের স্কুল বিভাগ হিসাবে। ১৯৬৮ সাল কলেজ থেকে স্কুল আলাদা হয়ে গিয়ে নাম রাখা হয় ইসলামিয়া সরকারি হাই স্কুল যা কলেজে ভবনের নিচে তলায় উত্তর-পূর্ব অংশে এই স্কুলটি এখনো কার্যক্রম চলছে।
আরও পড়ুন: সফর শেষে ফিরছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী
১৯৬৮ সালে স্কুল আলাদা হওয়ার পর কলেজের নাম বদলে রাখা হয় সরকারি ইসলামিয়া কলেজ, ঢাকা। এরপর ১৯৭২ সালে আবার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ঢাকা। যা এখনো এই নামে পরিচিত হয়ে আসছে। ১৯৭৪ সালে ১৬৯জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলে-ও বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৮হাজার।
১৯৯২ সালে থেকে কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এই কলেজর প্রথম অধ্যক্ষ মাওলানা ওবায়দুল্লাহ আল ওবায়দীর এবং বর্তমানে অধ্যাপক আমেনা বেগম।
আরও পড়ুন: কানাডার ওপর রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা
কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে শহীদ শামসুল আলম নামে একটি ছাত্রাবাস, এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে ২টি দুতালা বাস। রয়েছে একটি খেলার মাঠ। এছাড়া ও রয়েছে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের পাশে কালো দেওয়ালের উপর পাথরের খোদাই করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ৭মার্চ এর ঐতিহাসিক ভাষনও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন চিত্র।
শিক্ষার্থীদের প্রতিভাকে বিকশিত করার জন্য রয়েছে ইংলিশ ক্লাব, চেস ক্লাব, রোভার ও স্কাউট, ডিবে টিং ক্লাব, বিএনসিসি ও সাংবাদিক সমিতি। যা শিক্ষকরা মোডারেটর করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বিভাগীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা প্রকার প্রতিযোগিতায় বরাবরই সাফল্য অর্জন করেছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
সান নিউজ/এমকেএইচ