সান নিউজ ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছাত্রলীগের চার কর্মীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে ‘মিনি গেস্টরুমে’ ডেকে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। সাধারণত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে গেস্টরুম নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করতে দেখা যায়। এবার দ্বিতীয় বর্ষের কোনো শিক্ষার্থীর নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠল।
আরও পড়ুন: খাদ্যঝুঁকিতে গোটা বিশ্ব!
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবু তালিব পরে ভয়ে হল ছেড়েছেন। এ ছাড়া ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ার অভিযোগ তুলে একই রাতে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থীকে হল থেকে ছাত্রলীগ বের করে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। আর এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সভাপতি হন মেহেদী হাসান শান্ত, সাধারণ সম্পাদক হন মাহবুবুর রহমান। নতুন কমিটি ঘোষণার পরই আবাসিক হলের চিত্র বদলে যায়। হলের অতিথিকক্ষে ডেকে নির্যাতন করার ঘটনা শিক্ষার্থীদের কাছে ‘গেস্টরুম নির্যাতন’ নামে পরিচিত। অন্যদিকে হলের কোনো কক্ষে ডেকে নির্যাতন করা হলে তাকে শিক্ষার্থীরা ‘মিনি গেস্টরুম’ নির্যাতন বলেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, মেহেদী হাসান শান্ত হলের সভাপতি হওয়ার পর ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল বাদে অন্য এলাকার শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। তবে আবাসিক হলের সিট হারানোর ভয়ে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন এসব শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার ৮ জেনারেল বরখাস্ত
নির্যাতনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তালিবের সহপাঠীসহ তৃতীয় বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থীর ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন এলাকায় সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শেখ শান্ত আলমের সামনে আবু তালিব ধূমপান করেছেন, এমন অভিযোগে গতকাল রাতে তাঁকে (তালিব) হলের ২০১ (ক) নম্বর কক্ষে তলব করা হয়। সেখানে তালিবের অন্য সহপাঠীদেরও ডাকা হয়। ওই কক্ষে যাওয়ার পর তালিবের মুখে জোর করে সিগারেট ধরিয়ে দেন শেখ শান্ত আলম ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইমদাদুল হক ওরফে বাঁধন। তালিবকে হাত দিয়ে না ধরে ও ধোঁয়া না ছেড়ে সিগারেটটি শেষ করতে বলেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: মধ্যবিত্ত মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে
ওই শিক্ষার্থীরা বলেন, নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতে না পারায় আবু তালিবকে স্টাম্প দিয়ে পেটান শান্ত আলম ও ইমদাদুল। এ সময় তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শাহাবুদ্দিন ইসলাম ওরফে বিজয় এবং আইন বিভাগের নাহিদুল ইসলাম ওরফে ফাগুন তালিবকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অনিয়মিত হওয়ার অভিযোগ তুলে এদিন রাতেই অন্তত ১০ জন ছাত্রকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওই শিক্ষার্থীরা হলের ৩০১ (ক) নম্বর কক্ষে থাকতেন। কক্ষটিতে তালাও ঝুলিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগ।
ঘটনার বিষয়ে জানতে ভুক্তভোগী আবু তালিবের সঙ্গে শুক্রবার দুপুরে পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তিনি এ সময় ঘটনার বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে এই মুহূর্তে ভয়ে হলের বাইরে আছেন বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: সব টিভিতে দেখাবে ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শান্ত আলম কাছে দাবি করেন, এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা ও ভুয়া। এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। একই সাথে ইমদাদুলও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
যে চারজনের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা সবাই হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ওরফে শান্তর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্ত বলেন, এটা তাদের রুমমেটদের বিষয়। এতে ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতা নেই।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় নিহত ৩
এ বিষয়ে হলের হাউস টিউটর ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রাকিব উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, হলে কী হচ্ছে না হচ্ছে ২৪ ঘণ্টাই কি আমরা এগুলো দেখবো? আমাদের তো ক্লাস রয়েছে, পরিবার রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ মো. আকরাম হোসেন বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। দায়িত্বরত শিক্ষকদের খোঁজ নিতেও বলেছেন। অভিযোগের তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সান নিউজ/এমকেএইচ