নিজস্ব প্রতিনিধি পাবনা: প্রতিবন্ধকতাও দমিয়ে রাখতে পারেনি পাবনার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছয় শিক্ষার্থীকে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে চান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থীরা। মানবকল্যাণ ট্রাস্টের ছয়জন অদম্য ছাত্ররা অংশ নিয়েছিলেন উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায়। ছয়জনই সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে।
এই ছয়জন শিক্ষার্থীরা হলেন, পাবনার নাজিরপুর গ্রামের মোয়াজ্জেম প্রামাণিকের ছেলে রুহুল আমিন। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বুজিয়াম গ্রামের ইউনূস আলীর ছেলে তোফায়েল মিয়া, রাজশাহী শাহমখদুমের পবা নতুনপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সৎসঙ্গ দেরুলি গ্রামের কানাই মন্ডলের ছেলে গলক মন্ডল, সিরাজগঞ্জের সয়েরাবাদের বাঐইতারা গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে খোকন আলী এবং সিরাজঞ্জের উল্লাহপাড়ার বাঙালাপ্রতাপ গ্রামের মুন্তাজ আলীর ছেলে রাকিব হাসান।
রুহুল আমি পেয়েছেন জিপিএ-৪.৬, তোফায়েল মিয়া জিপিএ-৪.০৮, সাইফুল ইসলাম জিপিএ-৪.০৮, গলক মন্ডল জিপিএ-৪.৩৩, খোকন আলী জিপিএ-৪.৪২ ও রাকিব হাসান জিপিএ-৪.৩৩।
জীবনসংগ্রামী এই শিক্ষার্থীরা ব্রেইল পদ্ধতিতে পরীক্ষা দেন। এই পদ্ধতিতে সহায়তায় অংশগ্রহণ করেন ছয় শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পাবনা শহীদ বুলবুল কলেজ রাকিব হাসান এবং অন্যরা দোগাছী কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দেন।
আরও পড়ুন: ফের দায়িত্ব নিলেন আইভী
উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, আমাদের এমন ফলাফলের পেছনে মানবকল্যাণ ট্রাস্টের অবদান সবচেয়ে বেশি। তাদের সঠিক দিকনির্দেশনায় আমরা সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি। এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য আমরা গর্বিত।
উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রুহুল আমিন বলেন, অন্ধ হয়ে জন্ম নেওয়ার পর থেকে সমাজের লোকজন আমাদের অবহেলার দৃষ্টিতে দেখত। আমরা পরিবারের জন্য বোঝা, এমন ভাবা হতো। কিন্তু আমরা পরিবারের বোঝা হতে চাইনি। তাই নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চাই। আমরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশ ও মানুষের জন্য, বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করতে চাই। সরকারের আর্থিক ও প্রতিষ্ঠানিকভাবে সহযোগিতা পেলে সাফল্য অর্জন করে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব।
পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, জন্মগতভাবে তারা দৃষ্টিপ্রতিবন্দ্বী হলেও সব বাধা ও প্রতিকূলতাকে জয় করার প্রবল ইচ্ছা রয়েছে তাদের মধ্যে। তারা সোনালি ভবিষ্যৎ অর্জনের যে স্বপ্ন দেখছে, তা বাস্তবায়নে কাজ করছে মানবকল্যাণ ট্রাস্ট।
তিনি আরও বলেন, ব্রেইল পদ্ধতিতে শ্রুতলেখকের সাহায্যে তারা শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকে, কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ নেই। সরকার যদি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্রেইল পদ্ধতি চালু করে, তাহলে শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও শিক্ষা ক্রার্যক্রমে অংশ নিয়ে ভালো ফল করতে পারবে।
আরও পড়ুন: শিল্পা শেঠিকে আদালতে তলব
উল্লেখ্য, পাবনা সদর উপজেলার সিঙ্গা গ্রামে অবস্থিত মানবকল্যাণ ট্রাস্টে আশ্রয় পান ওই ছয়জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তারা ছাড়াও আছেন আরও ৫৫ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, ১২ জন শারীরিক প্রতিবন্ধী, ১৮ জন বাকপ্রতিবন্ধী। এই ১৪৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তাদের থাকা-খাওয়াসহ সব দায়দায়িত্ব বহন করছে আবাসিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব শিক্ষার্থী এখানে এসে অবস্থান করেন। তাদের মধ্যে প্রাথমিকের গন্ডির বাইরে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারীরাও রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫০ জন পবিত্র কোরআনে হাফেজ ও ২৫ জন শিক্ষার্থী এমএ পাস করে বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সাননিউজ/এমআরএস