বিশ্ববিদ্যালয়ন প্রতিনিধি: সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ।
প্রসঙ্গত, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। কয়েক দফা বৈঠক শেষে ভিসির সঙ্গে মিলিত হয়ে এ পরামর্শ দেন মন্ত্রী।
আজ শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য এসব তথ্য জানান।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনায় শিক্ষক , শিক্ষার্থী , কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ যারা আহত হয়েছেন তাদের সবার প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। উক্ত ঘটনার ধারাবাহিকতায় সৃষ্ট অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক , শিক্ষার্থী , কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অবস্থা দ্রুত ফিরিয়ে আনতে শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে শিক্ষা উপমন্ত্রীসহ সরকারের সকল স্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ সিলেটের সুশীল সমাজের সবাইকে এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা নিরসনে মিডিয়া কর্মীদের যারা দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছেন তাদেরকেও জানাচ্ছি ধন্যবাদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর ও স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের এই প্রিয় প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা সম্ভব হবে।
এদিকে, দীর্ঘ ২৫ দিন পর গতকাল শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) নিজ বাসভবন থেকে বাইরে বেরিয়ে আসলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
এরআগে, দাবি আদায়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
গত রোববার (১৬ জানুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে তারা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। দাবি আদায় না পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে গতকাল শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষামন্ত্রী সিলেট গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৈঠক করেন। পরে তিনি উপাচার্য কার্যালয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনায় বসেন।
রাত ৭টা ৪০ মিনিটে সংবাদ সম্মেলন করেন বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম। এ সময় রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সব ঘটনার জন্য শিক্ষার্থীসহ সবার কাছে উপাচার্যকে দুঃখ প্রকাশ করার জন্য বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
এছাড়া যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষার স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে অনলাইন বা অফলাইনে দ্রুত শিক্ষা কার্যক্রম চালুর বিষয়েও কথা বলান তিনি।
এর আগে শুক্রবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে বিমানে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি।
এ সময় সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্টরা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। দুপুর ১২টায় সিলেট সার্কিট হাউস মিলনায়তনে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
গত বছরের ২৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল খুলে দেওয়া হয়। প্রায় ১৯ মাস পর ওই দিন থেকে হলে ফিরতে শুরু করেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
ফেরার পর হলে তারা বিভিন্ন সংস্কার দেখতে পান। পাশাপাশি বেশ কিছু নতুন নিয়মনীতি ও সমস্যার সম্মুখীন হন বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের আবাসিক ছাত্রীরা।
এসব কারণে গত ১৩ জানুয়ারি থেকে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: মানুষ এখন আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করে
এরপর ১৬ জানুয়ারি বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে।
পরে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করে এত দিন আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা।
সান নিউজ/ এইচএন