নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছেন। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেল সোয়া চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা জানান।
শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষ থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং চলমান সংকট নিরসনে সিলেটে এসে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করায় তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সিলেটে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে
শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৬ জানুয়ারি পুলিশি হামলার ঘটনায় আহত এবং অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সকল খরচ পরিশোধ করায় আমরা প্রথমেই প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পুলিশের হামলার ঘটনায় আহত সজল কুন্ডুর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনায় শিক্ষামন্ত্রী আমাদের মূল দাবিসহ অনান্য দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা সব শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তারা বলেন, আমরা দেখেছি শিক্ষামন্ত্রী তার প্রেস ব্রিফিংয়ে আমাদের দাবি ও বিভিন্ন সমস্যা প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে শাবিপ্রবিতে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করায় শাবিপ্রবির সকল শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা তাকে জানাতে চাই আমরা তার সঙ্গে আমাদের দাবি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। তার সামনে উপস্থাপনের জন্য বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। আমরা শিক্ষার্থীরা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে আমাদের ক্যাম্পাসে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আশা করব তিনি (শিক্ষামন্ত্রী) দ্রুতই আমাদের ক্যাম্পাসে এসে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবেন। একই সঙ্গে আমরা এও আশা করছি যে ইতোমধ্যে আমাদের মূল দাবিসহ অন্যান্য ব্যাপারে যে সমস্ত আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সেগুলোও পূরণ করা হবে।
আরও পড়ুন: ৪৪তম বিসিএসের আবেদনের সময় বাড়ল
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) রাত ১১টায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ‘মৃত্যু অথবা মুক্তি’ আলপনা আঁকেন শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী অহিংস আন্দোলনের অংশ হিসেবে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ‘মৃত্যু অথবা মুক্তি’ আলপনা এঁকেছেন তারা। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরেও উপাচার্যবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান এবং কার্টুন এঁকে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জানুয়ারি থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিও সামনে আসে।
এরপর ১৬ জানুয়ারি বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশ ৩০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে।
১৯ জানুয়ারি বিকেলে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তার বাসভবনের সামনে আমরণ অনশন শুরু করেন ২৩ জন শিক্ষার্থী। একই দাবিতে পরদিন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে কয়েকশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল বের করেন।
রোববার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আরও চার শিক্ষার্থী। এনিয়ে অনশনরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ জনে। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সান নিউজ/এনকে