জান্নাত জাহান জুঁই, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়: ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় কড়া সম্প্রদায়ের লাপোল কড়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগে ১৫ তম হয়েছেন। এর আগে এই সম্প্রদায়ের কেউ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোতে পারেনি।
জানা গেছে, বাংলাদেশে কড়া সম্প্রদায় প্রায় বিলুপ্তির পথে। দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় ২৪ পরিবার এবং সদর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গায় ৪টি পরিবারসহ কড়া সম্প্রদায়ের মাত্র ২৮ টি পরিবার টিকে আছে। এর সদস্য সংখ্যাও নেই বললেই চলে। মাত্র ১০৪ জন সদস্য নিয়ে এই সম্প্রদায় এখন বাংলাদেশে বিরাজ করছে।
ব্যবহারিক পরীক্ষার পর প্রকাশিত চূড়ান্ত মেধাতালিকায় দেখা যায়, লাপোলের অবস্থান ১৫তম। তিনি এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৩.৩৩ এবং এইচএসসিতে ৩.৫৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। বৃহস্পতিবারের ব্যবহারিক পরীক্ষায় ১০০-এর মধ্যে ৯০ পেয়েছে লাপোল।
ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পেয়ে উচ্ছ্বসিত লাপোল কড়া জানান, প্রতিদিন সূর্যোদয় দেখি কিন্তু আজকে অনুভূতি হচ্ছে যেন জীবনের সূর্যোদয় হয়েছে! প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযোদ্ধার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হওয়ার পর এমনই অনুভূতি হয়, অনিশ্চিত অন্ধকার, কালো রাত পেরিয়ে যেনো নতুন এক সূর্যোদয় দেখছি। এই সূর্যোদয় কোনো প্রাকৃতিক সূর্যোদয় নয়, জীবনে সফলতার সূর্যোদয়। যে মহৎ আত্মার ব্যক্তিগণ আমাকে এই সফলতার জন্য সাহায্য করেছেন, তাঁদের সবাইকে আমি আমার আত্মার আত্মীয়তা স্বীকার করছি এবং হৃদয় নিংড়ানো অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
থিয়েটার অ্যান্ড পারফমেন্স স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আল-জাবির বলেন, ‘লাপোল কড়া তার ব্যবহারিক পরীক্ষায় পারফরম্যান্সের মাধ্যমে আমাদের বিচারকদের মন জয় করেছেন। তিনি যদি ভর্তি হোন তাহলে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবো। কড়া সম্প্রদায় যেখানে বিলুপ্তির পথে, সেখানে লাপোল কড়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন কড়া সম্প্রদায়কে আগামীতে সাহস যোগাবে। ওর সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করছি।’
প্রসঙ্গত, লাপোল কড়া বিরল উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের রাঙ্গন গ্রামের রতন কড়ার ছেলে। কড়াদের মধ্যে লাপোলই প্রথম গতবছর এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ওই সম্প্রদায়ের ১০৪ জন সদস্যের মধ্যে লাপোল স্থানীয় রাঙ্গন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী, হালজায় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও বোর্ড হাট মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাস করেন।
জানা গেছে, সমাজের কাছে নিরাপত্তাহীনতায় থাকা দিনাজপুরের বিরলে আদিবাসী কড়া সম্প্রদায়ের মানুষ নিঃসংকোচ এবং নিরাপদ জীবনযাপনের অধিকার চায়। উচ্ছেদের হুমকিতে থাকা কড়া সম্প্রদায়ের ১৮ পরিবারের অসহায় মানুষগুলো যেন এদেশে বসবাসের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে, সবসময় তাদের দিন কাটছে আতঙ্কে। কিন্তু লাপোল কড়ার মতো শিক্ষার্থীরা যদি এভাবে নিজেদের বিকশিত করে তুলে তাহলে তাদের এই লড়াই সহজ হয়ে যাবে। তাদের মধ্যে আতঙ্কও বিরাজ করবে না। লাপোল কড়ার মতো শিক্ষার্থীরা দেশ ও সমাজকে পরিবর্তন করে আলোর মুখ দেখাবে বলে বিশ্বাস করেন বিশিষ্টজনরা।
সান নিউজ/এমকেএইচ