সান নিউজ ডেস্ক:
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ ৬ই অগাস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। এই সময়ে সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে এই বন্ধের কারণে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা (এইচএসসি) নিয়ে অনিশ্চয়তাও বাড়ল।
সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে সেপ্টেম্বর নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। কিন্তু পরীক্ষা না হওয়ায় কবে নাগাদ এই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করতে পারবেন, তাদের একাডেমিক ক্যালেন্ডার থেকে একটি বছর হারিয়ে যাবে কিনা, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে ২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এইচএসসি) মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লক্ষের বেশি। করোনা পরিস্থিতির কারণে দফায় দফায় সাধারণ ছুটি বাড়ায় ২০২০ শিক্ষাবর্ষ পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে গেছে।
একদিকে সরকার যেমন এখনো এইচএসসি পরীক্ষার কোন সুনির্দিষ্ট তারিখ বলতে পারছেন না, তেমনি পাবলিক-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও পরিস্থিতির উন্নতি আর সরকারি সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সব কিছু নির্ভর করছে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কি হয়, তার ওপরে।
বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন বলছেন, "ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার্থীদের বিষয়টি নিয়ে আমাদের চিন্তাটা হলো পরিস্থিতির যখন উন্নতি হবে, স্বাভাবিকের দিকে আসবে, তখন আমর তারিখটা ঘোষণা করবো। তখন পরীক্ষাটা নেবো।"
অগাস্টের পর পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করলে, পরীক্ষা অনুষ্ঠান, ফলাফল প্রকাশ হতে হতে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস লেগে যেতে পারে। তার কিছুদিন পরে আরেকটি এইচএসসি পরীক্ষার সময় চলে আসবে। সেক্ষেত্রে কী করা হবে, জানতে চাইলে তিনি বলছেন, এখনি তারা এ বিষয়ে আগাম বলতে চান না।
"আমরা কিছু কন্টিনজেন্সি প্লান (সম্ভাব্য সব ঘটনার জন্য বিকল্প পরিকল্পনা) করে রেখেছি। পরীক্ষা কোন সময়ে নেবো, তার সঙ্গে ম্যাচ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে। পরিস্থিতি দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।", বলছেন এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশে সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন সেশনে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ। কিন্তু এই বছর সেটা কবে হবে, তা কারো জানা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান জানান, "সব কিছুই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, এটাই বাস্তবতা। শুধু ভর্তি নয়, আমাদের গ্রাজুয়েশন কার্যক্রমও প্রলম্বিত হবে। ভর্তি কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু কিছু সিদ্ধান্ত এর মধ্যেই আমরা নিয়ে রেখেছি। এখন আমরা অপেক্ষা করছি পরিস্থিতি দেখার জন্য যে, অগাস্ট সেপ্টেম্বর নাগাদ পরিস্থিতি কেমন হয়।"
তিনি বলছেন, এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হলে সেই অনুযায়ী তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।
তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এই জটিলতা একটু কম। তারা বছরে তিনটি সেমিস্টারে ছাত্র ভর্তি করে থাকে। ফলে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের পর তারা যেকোনো সময়েই ভর্তি করতে পারবে। তবে এই সময়সূচীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভর্তি সময় বদলে নিতে হবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।
এ বিষয়ে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক এম. শাহজাহান মিনা বলেন, "বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো সেমিস্টারেই শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবে। তবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে যেমন একবছরের একটা গ্যাপ থাকতো। এখন হয়তো সেই গ্যাপটা একবছর থাকবে না, সেটা হয়তো আট মাসে নেমে আসবে।"
অপর দিকে, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশন বা ক্যাম্পে। প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সারা বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর চাপ পড়েছে। বাংলাদেশে যদি এইচএসসির মতো বড় পরীক্ষা আয়োজনে সমস্যা হয় বা পিছিয়ে দিতে হয়, তাহলে সেটার বিকল্প এখনি ভাবা উচিৎ।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন টানা বন্ধের ঘটনা আর ঘটেনি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শিক্ষা ব্যাহত হওয়ায় অটো প্রমোশন হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হয়েছিলেন, তারা একটা সেশন জটে পড়লেও, পরবর্তী এক-দুই বছরের মধ্যে সেটার সমাধান হয়েছিল।