নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজ। আজ ১৮০ পেরিয়ে ১৮১ বছরে পদার্পণ করেছে। ১৮৪১ সালের এই দিনে (২০ নভেম্বর) প্রতিষ্ঠিত হয়। এখনো পর্যন্ত শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে কলেজটি। শুধু এ দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রেই নয়, জাতির ইতিহাসেও এক অনন্য অধ্যায়ের নাম ‘ঢাকা কলেজ’।
প্রতিষ্ঠার পরপরই বদলে যায় সমগ্র ঢাকার চালচিত্র। ঢাকা হয়ে ওঠে সমগ্র পূর্ববাংলার ইংরেজি শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও হিন্দু কলেজের শিক্ষক জে. আয়ারল্যান্ডকে প্রথম প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করা হয়। তার আগমনের সাথে সাথে বদলে যেতে থাকে কলেজের প্রাতিষ্ঠানিক এবং শিক্ষাগত ব্যবস্থাপনার ভিত্তি। সে অর্থে আয়ারল্যান্ডই ঢাকা কলেজের সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক।
এরপর কলেজের জন্য নির্মাণ করা হয় কার্জন হল। ভিক্টোরীয় স্থাপত্যরীতি, মোগল স্থাপত্যশৈলী আর বাংলার স্বতন্ত্র সংবেদনশীল বৈশিষ্ট্য নিয়ে তৈরি এই ভবনটি ১৯০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জন ঢাকায় এসে এর উদ্বোধন করেন। কথিত আছে ‘কার্জন হল নির্মিত হয়েছিল টাউন হল হিসেবে’। কিন্তু শরীফউদ্দীন আহমদ এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন এ ধারণাটি ভুল। এটি নির্মিত হয় ঢাকা কলেজের পাঠাগার হিসেবে। এবং নির্মাণের জন্য অর্থ প্রদান করেন ভাওয়ালের রাজকুমার।
১৯০৪ সালে ঢাকা প্রকাশ লিখেছিল ‘ঢাকা কলেজ নিমতলীতে স্থানান্তরিত হইবে’। এর ৪ বছর পর ১৯০৮ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ওই বছরই ঢাকা কলেজ কার্জন হলে স্থানান্তরিত হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর ঢাকা কলেজ তার সর্বস্ব দিয়ে ঠাঁই নেয় পুরাতন হাইকোর্টের লাট ভবনে (বর্তমান সুপ্রীমকোর্টে)।
বাংলার আকাশে যখনই দুর্যোগ আর অশান্তির মেঘ জমেছে ‘ঢাকা কলেজ’ তখন তার সর্বস্ব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে রণাঙ্গনে। ১৯৩৯-৪৫ সালের মহাযুদ্ধ, ১৯৪১ সালের দোল দাঙ্গা, ১৯৫২ সালে ‘রক্তে রাঙানো’ ভাষা আন্দোলনে, ১৯৫৩ সালের গোলযোগ, ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন, ১৯৬২ সালের সামরিক শাসন ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা কলেজের অবস্থান ছিল প্রত্যক্ষ।
ঢাকা কলেজকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুর রাজ্জাক লেখেন ‘সামরিক শাসনের স্টিমরোলার থেকে কিভাবে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করা যায় এ ব্যাপারে পথ বের করার জন্য কতদিন যে সন্ধ্যার পর ঢাকা কলেজের মাঠে বসে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে গোপনে শলাপরামর্শ করেছি তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সেদিন আমার সে বিদ্রোহী সত্তা পরবর্তীকালে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত। বিদ্রোহের এ বীজ আমার মাঝে রোপিত হয়েছে ঢাকা কলেজেই।’
পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশে কাজ করছে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী এবং সামাজিক সংগঠন। ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা কলেজ আবৃত্তি সংসদ, ঢাকা কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপ, ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতি, বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্ট, ঢাকা কলেজ অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব, বিজনেস ক্লাব, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, ডিবেটিং সোসাইটি, মিউজিক স্কুল, সায়েন্স ক্লাবসহ প্রায় ২০টি সংগঠন।
কালের আবর্তে পৌনে দুই শতাব্দী পেরিয়েছে ‘ঢাকা কলেজ’। ১৮০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে টিকে থাকা এই প্রতিষ্ঠান এবার ১৮১ বছরে পা দিচ্ছে। শুভ হোক এই পদযাত্রা। এই ঐতিহ্য নিয়ে ঢাকা কলেজ টিকে থাকুক চিরকাল। অতীতের মতো ভবিষ্যতেও কলেজ গৌরবের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে এমনই আশাবাদ সবার। শুভ জন্মদিন প্রিয় ঢাকা কলেজ।
সান নিউজ/এনএএম