নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বর্তমান করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় প্রায় দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধের পর গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজনের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান চলছে। করোনা সংক্রমণ না বাড়লে আগামী নভেম্বরে এসএসসি এবং ডিসেম্বরে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। তবে সংক্রমণ বাড়লে আবারও অটোপাসের দিকে যাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী নভেম্বরের শুরুতে এসএসসি সমমান ও ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এইচএসসি সমমান পরীক্ষা শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে নভেম্বরে অষ্টম শ্রেণির জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা আয়োজন করা প্রায় অসম্ভব। পরীক্ষা নেয়া না গেলে শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের তিনটি নৈর্বচনিক বিষয়ের উপর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে কোনো কারণে যদি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে সব বিষয়ের ফল দেওয়া হবে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’-এর মাধ্যমে। আর পরীক্ষা নেওয়া গেলে নৈর্বাচনিক বাদে বাকি সব বিষয়ে গ্রেড দেওয়া হবে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে করে।
সূত্র আরও জানায়, পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সেটি ধরেই শিক্ষা বোর্ডগুলোকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। তবে করোনা যেহেতু লাগামহীন তাই বিকল্পও ভেবে রাখা হচ্ছে। এজন্য চলতি বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের নম্বর অন্তর্ভুক্তির নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক জানান, দেশে চলমান করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে চলতি বছরের এসএসসি এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় আবারও অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। সেজন্যই শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের নম্বর অন্তর্ভুক্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা পরীক্ষা আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখছি। যেন পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে দ্রুত পরীক্ষা নিয়ে নেওয়া যায়।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এসএম আমিরুল ইসলাম বলেন, এসএসসি পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। প্রশ্নপত্র ট্রেজারিতে পাঠানো হয়েছে। এখন শুরু করার অপেক্ষায়।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করা হবে। এ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজ চলছে। বর্ধিত সময় অনুযায়ী আগামী ২২ সেপ্টেম্বর এ পরীক্ষার ফরম পূরণ শেষ হবে। এরপর প্রবেশ পত্র তৈরির কাজ শুরু করা হবে।
চলতি বছর জেএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বছরের আর মাত্র সাড়ে তিন মাস বাকি। এর মধ্যে জেএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হবে না। আগামী মাসের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী এ পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে একটি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, চলতি বছর জেএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা কোনোভাবে সম্ভব নয়। এ পরীক্ষা নেওয়ার মতো কোনো সিডিউল শিক্ষা বোর্ডগুলোতে নেই। এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন ও ফলাফল প্রকাশের কাজ শেষ করতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পার হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের জেএসসি পরীক্ষা নিতে চাইলে আগামী বছরের মার্চে নিতে হবে। সে সময় ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষা শুরু করতে হবে বলে সে সুযোগও নেই। চলতি বছরের জেএসসি পরীক্ষা আয়োজন করার কোনো ধরনের প্রস্তুতি নেই। অটোপাস ঘোষণার আলাপ-আলোচনা চলছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, এ বছরের যে কয়দিন সময় রয়েছে সে সময়ের মধ্যে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন করতে পার হয়ে যাবে। এরপর পরের এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এ দুই পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করে প্রকাশ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ১৮ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি দফায় দফায় বাড়ানো হয়। এছাড়া, দেশে করোনার কারণে এর আগে ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সবাইকে অটোপাস দিয়ে দেয়া হয়। আগের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সে সময় ফল প্রকাশ করা হয়। যাতে প্রায় পৌনে ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান ঘটে।
সান নিউজ/এনএএম