নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য দ্বিতীয় দফায় দেয়া প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক অনুদান অধিকাংশের কাছে পৌঁছায়নি। এই অনুদান ঈদের আগে পাওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা আটকা পড়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অর্থ ছাড়ের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুদানের অর্থ প্রথম ধাপে ব্যাংক একাউন্টে দেয়া হলেও এবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাঠানো হচ্ছে। এতে করে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের নামের বানান ভুল, মোবাইল নম্বর ভুল, জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল রেজিস্ট্রেশন গরমিলসহ নানা কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে টাকা যাচ্ছে না।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ঈদুল আজহার আগে এ অর্থ পাঠানোর কথা থাকলেও এখনও তা পৌঁছায়নি তালিকাভুক্ত অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর হাতে।
জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে অনুদানের জন্য তালিকাবদ্ধ এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫০ হাজারের মতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ অর্থ পেয়েছেন। বাকি ৭০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এ অর্থ পাননি।
গত দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নন-এমপিও এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের কথা বিবেচনা করে আবারও আর্থিক অনুদান দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এদিকে গত বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীনে নন-এমপিও ৮০ হাজার ৭৪৭ জন শিক্ষককে পাঁচ হাজার টাকা এবং ২৫ হাজার ৩৮ জন কর্মচারীকে আড়াই হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়। এই খাতে সরকার ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়।
মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে ঈদের আগে নন-এমপিও শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের অর্থ দেয়ার কথা থাকলেও এখনও তা অর্ধেকের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর হাতে পৌঁছায়নি। কেনো পৌঁছায়নি সে বিষয়েও জানা সম্ভব হচ্ছে না। করোনার মধ্যে অর্থ ছাড়া পরিবারকে নিয়ে ঈদ কাটাতে হয়েছে। এ কারণে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ অর্থ প্রদান করায় নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। অনেকে নিজের নামে সিম কার্ড রেজিস্ট্রেশন না করা, সিম কার্ডের তথ্য অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধনে তথ্য ভুল দেখানো হচ্ছে। সারাদেশে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ পালিত হওয়ায় বর্তমানে সেসব সংশোধন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে শিক্ষক-কর্মচারীদের এ অর্থ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’ সহজে এ টাকা পৌঁছে দিতে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে এ অর্থ পাঠানোর দাবি জানান এ অধ্যক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক গোলাম ফারুক বলেন, ‘যারা সঠিক তথ্য দিতে পারছে তারা টাকা পেয়ে গেছে, যাদের তথ্যগত ভুল রয়েছে তাদের টাকা আটকে গেছে। ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য মাউশিতে একটি ছেলে রয়েছে। সেখানে সঠিক তথ্য প্রদান করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে অর্থ পৌঁছে যাচ্ছে।’
কতজন অনুদান বঞ্চিত হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত তিন সপ্তাহের আগের হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর কাছে অনুদানের অর্থ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকি প্রায় ৮০ হাজার জনের অর্থ আটকে আছে।’ যাদের অর্থ আটকে আছে তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে সঠিক তথ্য পাঠানোর পরামর্শ দেন মহাপরিচালক।
সাননিউজ/এমএইচ