সান নিউজ ডেস্ক : ভারতে রাজস্থানের থর মরুভূমি। যে দিকে চোখ যায়, শুধুই বালি। গরম হাওয়ায় টিকে থাকাই দায় সেখানে। এরই মাঝে চলছে পড়াশোনা।
মরুভূমির মাঝে স্কুল, ভাবতেই যেন গরম হাওয়া গায়ে ছ্যাঁকা দিয়ে যায়। তাও আবার নেই কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি)। স্কুলটিতে এতটাই বিজ্ঞানের ব্যবহার হয়েছে যে খোলামেলা পরিবেশে পড়াশোনা করেও গরম হাওয়া উপেক্ষা করা যায় সহজেই।
রাজস্থানের থর মরুভূমির মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছে বালিপাথরের তৈরি এই অত্যাধুনিক অবকাঠামো। মরুভূমির মাঝে এটি দেখে যে কেউ বিস্মিত হতে পারেন।
এটি আসলে মেয়েদের একটি স্কুল! নাম রাজকুমারী রত্নাবতী গার্লস স্কুল। স্থানীয় হলুদ বালিপাথর দিয়ে তৈরি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এসি না থাকলেও বাইরের এবং ভিতরের তাপমাত্রায় রয়েছে বেশ পার্থক্য। স্কুলের ভিতরের মাঠে ছাত্রীরা নিশ্চিন্তে খেলাধুলাও করতে পারবে।
স্কুলটি তৈরি করেছে আমেরিকার একটি বেসরকারি অলাভজনক সংস্থা। অনেক খুঁজে রাজস্থানের থর মরুভূমির এই জায়গাটিকে চিহ্নিত করে তারা। ২০১০ সালে প্রথম এ রকম একটি স্কুল তৈরির পরিকল্পনা করেন ওই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল দৌবে। তার জন্য দীর্ঘ সময় রাজস্থানে কাটিয়েছেন তিনি। সেখানকার সংস্কৃতি, পরিবেশ গভীরে বুঝেছেন।
এলাকার রাজনৈতিক নেতা এবং সরকারি স্তরে অনেক আলাপ-আলোচনার পরই এই স্কুলের অনুমতি পান তিনি। স্কুলটি কিন্ডারগার্টেন থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত।
এই অঞ্চলের বেশির ভাগ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত বলা চলে। মেয়েদের শিক্ষার হার একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। সেই অবস্থা কাছ থেকে উপলব্ধি করার পর মাইকেল চেয়েছিলেন এমন একটি স্কুল করতে, যা সারা ভারতে নজির সৃষ্টি করবে। যে স্কুলে ভর্তি হলে গর্ব বোধ করবেন অভিভাবকরা। স্কুলটি শুধু পুঁথিগত বিদ্যাই দেবে না, বরং এই অঞ্চলের সংস্কৃতিও তুলে ধরবে।
স্কুলটি ডিম্বাকার। চারদিক দিয়ে ঘেরা স্কুলের মাঝখানে ফাঁকা খেলার মাঠ। ছাদে এবং মাঠের উপর অর্থাৎ পুরো স্কুল জুড়েই রয়েছে সোলার প্যানেল। একদিকে যেমন এই সোলার প্যানেল বিদ্যুতের জোগান দেয় তেমন মাঠে ছায়া দেয়। যার নীচে নিশ্চিন্তে খেলতে পারবে শিক্ষার্থীরা।
বালিপাথর দিয়ে স্কুলটি তৈরি করায় কার্বন অনেক কম নির্গত হয়। ফলে স্কুল এবং স্কুলের আশেপাশের পরিবেশ তুলনামূলক অনেক ঠান্ডা। প্রাকৃতিক নিয়মে মরুভূমি রাতে ঠান্ডা এবং দিনে গরম হয়ে যায়। কিন্তু স্কুলের গঠন এমনভাবেই করা যাতে রাতের ঠাণ্ডা হাওয়া দিনভর স্কুলের ভিতরে আটকে থাকে। ফলে বাইরের থেকে অনেকটাই আলাদা ভিতরের তাপমাত্রা।
স্কুলের ভিতরের দেয়াল চুন দিয়ে প্লাস্টার করা। এটিও ইনসুলেটরের কাজ করে। ফলে এসি ছাড়াই স্কুলের ভিতরের পরিবেশ তুলনামূলক ঠাণ্ডা রাখা যায়।
স্কুলটির বাইরের দিকের দেয়ালে কোনো জানালা নেই। সমস্ত জানালা ভিতরের মাঠের দিকে। তাই হাওয়ার সঙ্গে বালি উড়ে স্কুলের ভিতরে ঢোকার উপায় নেই।
২০১৮ সালে স্কুল তৈরির কাজ শুরু হয়। ১ বছরের মধ্যেই সেটি সম্পূর্ণ হয়ে যায়। এই স্কুলটিকে পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হয়েছে।
তবে পুরোপুরি তৈরি হয়ে গেলেও স্কুলটিতে এখনও সেভাবে পড়াশোনা চালু করা যায়নি অতিমারি করোনার কারণে। চলতি বছরে শুরু করা যাবে বলেই আশাবাদী মাইকেল।
সুত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
সান নিউজ/এমএইচ