সাননিউজ ডেস্ক: মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে গত বছরের মার্চ মাস থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
সরকার আগামী ঈদের পর ২৩ মে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ২৪ মে থেকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছি গত মাসে। কিন্তু বর্তমানে দেশে করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপে সেটাও অনিশ্চিত। এমতাবস্থায় ১৩ মাস ধরে শিক্ষার্থীদের সময় কাটছে ঘরে বসে।
মহামারি শেষে কবে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার কোন সুনির্দিষ্ট উত্তর জানা নেই কারও। তবে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের মন-মানসিকতায়।
সারাদিন বাসায় বসে থাকায় মন বসছে না পাঠ্যবইয়ের পড়ালেখায়, কাটছে না সময়। শিক্ষার্থীরা আসক্ত হয়ে পড়ছেন ইউটিউব, ফেসবুক ও ইন্টারনেটের বিভিন্ন ভিডিও গেমসের প্রতি।
অনেক শিক্ষার্থীর হাতেই স্মার্ট ফোন থাকায় তারা ঝুঁকছেন ফ্লু-ফিল্ম, লাইকি, টিকটকসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন নিষিদ্ধ অ্যাপসের প্রতি। এতে নৈতিকতা নষ্টের পাশাপাশি তাদের মধ্যে সামাজিক ও পারস্পারিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে অনেকের আচার ব্যবহারেও এসেছে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ অভিভাবকরা।
গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পর থেকে সরকার অনলাইন ও টেলিভিশনে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস চালু করে। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। এসব ক্লাস তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি।
এছাড়া অনেক শিক্ষার্থী আবার ডিভাইসের অভাবে এসব ক্লাসে অংশ নিতে পারেনি। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্নই বলা যায়।
সরকারি চাকরিজীবী আনিসুর রহমানের ছেলে একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, অধিকাংশ সময়ই ছেলের সময় কাটে নিজের ঘরে। সেখানে কী করে কিছুই জানি না। এখন বড় হয়েছে, বেশি কিছু বললে মাইন্ড করে। কিন্তু লেখাপড়া বাদ দিয়ে সারা দিন ফেসবুক নিয়ে থেকে ওর যে ক্ষতি হচ্ছে, সেটা আমরা বুঝতে পারছি।
রফিকুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক জানান, তার ছেলে বাপ্পী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছুটির এই পুরো সময়টাতে তারা চেষ্টা করেও তাকে বইয়ের কাছে নিতে পারেননি। সে সারাদিন নিজ রুমে বসে হয় ল্যাপটপে নতুবা মোবাইল ফোনে মাথা গুঁজে থাকে। প্রতিদিন শেষরাতে ঘুমাতে যায়, বিকালে ঘুম থেকে ওঠে। ওর কোনো কাজে বাধা দিলেই মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করে। ছেলেটা কেমন যেন খিটমিটে স্বভাবের হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, সে সারাদিন নিজ রুমে বসে হয় ল্যাপটপে নতুবা মােবাইল ফোনে মাথা গুঁজে থাকে। প্রতিদিন শেষরাতে ঘুমাতে যায়, বিকালে ঘুম থেকে ওঠে। ওর কোনো কাজে বাধা দিলেই মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করে। ছেলেটা কেমন যেন খিটমিটে স্বভাবের হয়ে গেছে।
রাজধানীর একটি বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র ফারহার শাহরিয়ার অপি জানায়, বাইরে বের হতে পারি না, বাসায় থাকতে আর ভালো লাগে না। গেমস খেলে সময় পার করি। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধুদের সঙ্গে কথাও হয়না।
ইডেন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জেরিন হাছান কান্তা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে যেতে পারিনা। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় না। আর ভালো লাগে না।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি অনীহা চলে আসছে। তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ক্লাস-পরীক্ষা না থাকায় তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না।
তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে মিশতে পারছে না।ফলে তাদের মধ্যে একঘুয়েমি চলে আসছে। এছাড়া পর্যাপ্ত খেলার মাঠও নেই যে তারা খেলবে। এমতাবস্থায় তারা দিন দিন মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এইচ এ এম নাজমুল আহসান বলেন, প্রতিটি মানুষের শরীরে যেমন পুষ্টি দরকার, তেমনি মস্তিষ্কেরও পুষ্টি দরকার হয়। সারাদিন ফেসবুক-ইউটিউব থাকলে মস্তিষ্কের সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে যায়। চিন্তায় পরিবর্তন আসে। ভালো চিন্তা বাদ দিয়ে খারাপ চিন্তাগুলো মস্তিষ্কে ভর করে। আচার-আচরণ বদলে যায়। মানুষের সাথে ব্যবহারও খারাপ হতে থাকে।
সাননিউজ/এএসএম