নিজস্ব প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচিতে মহামারি করোনার কারণে ঝরে পড়া সমাজের অবহেলিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে একটি বিজ্ঞান পাঠশালা গড়ে তোলা হয়েছে। বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের কবি রজনী কান্ত সেন স্মৃতি সংসদের আঙ্গিনায় এই পাঠশালা গড়ে তোলা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ৩ জন শিক্ষার্থী পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে । তাও আবার সম্পূর্ণ খোলা আকাশের নিচে। নামকরণও করা হয়েছে বিজ্ঞান পাঠশালা নামে।
প্রতিদিন বিকালে ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় শতাধিক ঝরে পড়া শিক্ষার্থী এখানে এসে শিক্ষা গ্রহন করে। যা দেখতে ঐ এলাকা সহ আশেপাশের এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তাই আগ্রহচিত্তে বিকাল হলেই কোমলমতি শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার সেই কৌশল দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় জমাচ্ছে।
এই শিক্ষা কার্যক্রম দেখতে আসা অত্র এলাকার বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা এই প্রতিবেদককে জানায়, করোনাকালে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা অলস সময় পার করছিল। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদীয়মান শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খেলার ছলে পড়াচ্ছে তা দেখে আমরা বিমোহিত। তাদের এধরণের উদ্যোগের কারণে ছেলে মেয়েদের মাঝে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
ঐ গ্রামের সমাজ সেবক রেজাউল করিম ও আব্দুল কাদের এই প্রতিবেদককে বলেন, এখানে যারা পড়াশোনা করতে এসেছে তারা বেশিরভাগ দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়ে। এখানকার শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বিনামূল্য খাতা কলম দিচ্ছে। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা সাহায্য করে আসছি। আমরা মনে করি, তাদের মতো সারা উপজেলায় যদি এ ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম হাতে নেওয়া যায় তাহলে সমাজের হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েরা আর শিক্ষা আলো বঞ্চিত হবে না।
কোমলমতি শিশুরা জানায়, বিজ্ঞান পাঠশালায় পড়লে তাদের ভিষণ ভালো লাগে। স্যাররা তাদের বিজ্ঞান বক্সের মাধ্যমে খেলার ছলে শিক্ষা দেয়। যার কারণে তারা অতি সহজেই পড়াশোনা আয়ত্ত করতে পারে।
বিজ্ঞান পাঠশালার শিক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী মোস্তাকিম সরকার নিলয় জানান, আমরা ৩ বন্ধু এই গ্রাম থেকে বড় হয়েছে। আজ আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছি। তাই আমরা চিন্তা করলাম আমাদের এলাকায় একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে সমাজের অবহেলিত শিশুদের শিক্ষা দেব।
সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা বিজ্ঞান পাঠশালা নামের এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি । তবে এই স্কুলের কোনও একাডেমিক ভবন নেই। সম্পূর্ণ খোলা আকাশের নিচে। আমরা নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে এর পাঠ কার্যক্রম অব্যহত রেখেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানালেন, আমি বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। করোনা মহামারিতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ রয়েছে। তবে এটা একটি ভালো পদক্ষেপ। করোনা পরবর্তী সময়ে এই ধরনের পদক্ষেপ হতে পারে সামাজিক পরিবর্তনের দিক নির্দেশনা।
সান নিউজ/রেজাউল/এসএ