নিজস্ব প্রতিনিধি, কক্সবাজার : ২০১৩ সালে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ১০ সদস্য বিশিষ্ট ট্রাস্টের অনুকূলে অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনায় একটি ট্রাস্টি বোর্ড থাকার আইন থাকলেও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নামে দুটি ট্রাস্টি বোর্ডের পরিচয় দেওয়া হচ্ছে। দুই পক্ষের সদস্যরাই নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল উদ্যোক্তা ও ট্রাস্টি বলে দাবি করছেন। যদিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক ট্রাস্টি বোর্ড থাকার কোনও সুযোগ নেই।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের প্রথম শর্তই হলো অনধিক ২১ ও অন্যূতম ৯ সদস্যের একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি) গঠন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ১৫ ধারায় বিওটি বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার জন্য একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থাকবে এবং বোর্ডের মধ্যে থেকে একজন সদস্য বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি নির্বাচিত হইবেন।
আইনের এ ধারা অনুযায়ী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিওটি গঠনের সুযোগ নেই। যদিও কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিওটি হিসেবে পরিচয় দেওয়া দুইপক্ষই নিজেদের বোর্ডকে আসল দাবি করে বিপক্ষের ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত ট্রাস্টকে অবৈধ বলছে।
জানা যায়, ২০১৩ সালে ১০ সদস্যবিশিষ্ট কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের অনুকূলে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন বিওটির চেয়ারম্যান ছিলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। আর সেক্রেটারি ছিলেন লায়ন মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান।
বাকি ৮ সদস্যের সবাই বিওটি সেক্রেটারির স্ত্রী, ভাই, ভাতিজা ও শ্যালকসহ নিকটাত্মীয়। এজন্য মূলত বিওটি চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন আহমদ ও সেক্রেটারি লায়ন মোহাম্মদ মুজিবুর রহমানের নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হতো সিবিআইইউ।
আধিপত্যকে কেন্দ্র করে গত বছর বিওটি চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন আহমদ ও সেক্রেটারি লায়ন মোহাম্মদ মুজিবুর রহমানের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। দ্বন্দ্বের জেরে গত বছর বিওটির সভা করে সালাহউদ্দিন আহমদকে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি সালাহউদ্দিন আহমদের স্ত্রী ও ছেলেকেও ট্রাস্ট থেকে বের করে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে সালাহউদ্দিন আহমদ সেক্রেটারি লায়ন মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠাকালীন সব সদস্যকে বাদ দিয়ে নতুন একটি ট্রাস্ট গঠন করেছেন। বর্তমানে দুটি ট্রাস্ট আলাদাভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, আইন অনুযায়ী ট্রাস্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামত নেয়া বাধ্যতামূলক। যদিও সালাহউদ্দিন আহমদ তার স্ত্রী ও বিদেশে অবস্থানরত ছেলেকে নিয়ে তথাকথিত সভা করার কথা বলে প্রতিষ্ঠাকালীন সব সদস্যকে বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে একটি ট্রাস্ট গঠন করেছেন।
এসব অবৈধ দখলদারিত্ব আদালতের নজরে আনা হলে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা জারি করা হয়েছে। আমরা চাই, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের অবস্থাও খুবই নাজুক। ১-২ জন শিক্ষক দিয়েই চালানো হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগ। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া ব্যক্তিদের যোগ্যতা নিয়েও অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া যে ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলছে, সেখানেও শিক্ষার ন্যূনতম পরিবেশ নেই।
বাইরে থেকে ভবনটির দিকে তাকালে বিভিন্ন পরিবহনের নামের ভিড়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর হয়ে পড়ে। পর্যটক, যাত্রী ও পরিবহনের কারণে ভবনটির সামনে দিনভর লেগে থাকে বিশৃঙ্খলা। শিক্ষার ন্যূনতম পরিবেশ না থাকলেও প্রতি সেমিস্টারে শত শত শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে সিবিআইইউ।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শনে যায় ইউজিসির একটি প্রতিনিধি দল। সে দলের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা সেখানে গিয়ে শিক্ষার কোনও পরিবেশ দেখতে পাইনি। একাডেমিক, প্রশাসনিক কিংবা আর্থিক,কোথাও কোনও শৃঙ্খলা নেই। যাদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের একটি বড় অংশই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার জন্য যোগ্য নয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টের সংখ্যা একটিই হবে। যে কেউই নিজেকে ট্রাস্টি দাবি করার কোনও সুযোগ নেই। সোসাইটিজ এ্যাক্ট অনুযায়ী রেজিস্টার্ড ছাড়া অন্য কোনও ট্রাস্টকে স্বীকৃতি দেয়া হয় না।
আর ট্রাস্টিদের দ্বন্দ্ব হচ্ছে ব্যক্তিস্বার্থে। এখানে ব্যক্তিস্বার্থে কিছু করার কোনও সুযোগ নেই বলে জানালেন এই শিক্ষাবিদ। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থরক্ষায় কাজ করতে হবে।
সান নিউজ/এসএ