নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরের পর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা স্থায়ীভাবে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। পাশাপাশি পরিস্থিতি বুঝে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো আগে খুলে দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
রোববার (২৪ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস উপলক্ষে অনলাইনে এক আলোচনা সভায় তিনি তার পরামর্শ তুলে ধরেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম এ সময় সংযুক্ত ছিলেন।
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, করোনায় ছোট বাচ্চাদের ঝুঁকি কম সেজন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়। সপ্তাহে তিন দিন দুই শিফটে (১০-৩টা) ক্লাস হবে। এভাবে করলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে। আর শিক্ষকদের অতিরিক্ত খাটুনি হবে। সেজন্য সরকার একটা অতিরিক্ত বেসিক বেতন দিয়ে অনুপ্রাণিত করা যায়।
প্রাথমিক স্কুল খোলার প্রস্তাবনার বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব হাসিবুল আলম বলেন, আপনার প্রস্তাবনা লিখে রেখেছি। আমরা চেষ্টা করব। তিনি বলেন, শিক্ষকরা স্কুলে আসছেন। তারা দৈনন্দিন নানা কাজ করছেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আরও বলেন, পঞ্চম এবং অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক আছে। করোনার কারণে এ বছর বাদ হয়েছে।
শিক্ষাকে পাঠ্য পুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ব্যবহারিক শিক্ষা চালু করতে হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃষাভায় একমুখী শিক্ষা দিতে হবে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে চাকরি তাকে নেয়। এ ক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি (পিপিপি) উদ্যোগে বাস্তবায়ন করা যায়।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, মাদরাসা শিক্ষাসহ কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছি। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে কারিগরি শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না, এজন্য একাডেমিক কোলাবোরেশন তৈরির চেষ্টা করছি। কারিক্যুলামও সে অনুপাতে তৈরি করতে হবে। এখন থেকে ক্লাস রুম যেমন চালু থাকবে তেমনি অনলাইনে শিক্ষাদান চালু থাকবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
দীপু মনি আরও বলেন, আমরা পরীক্ষা নির্ভর সনদ সর্বস্ব ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে চেষ্টা করছি। শ্রেণি কক্ষে মূল্যায়ন তিনটি বিষয়ের পর আরও বিষয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। অষ্টম শ্রেণির পর ভাগ হয়ে যায়, দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবাই একই সিলেবাস পড়বে। বছরভিত্তিক পরীক্ষা হবে, বছর শেষে অনেক কম নম্বরে পরীক্ষা হবে। এতে চাপ কমবে।
তিনি আরও বলেন, জিপিএ-৫ পেলে অভিভাবকদের মিষ্টির ছড়াছড়ি, কম পেলে কবরের নিস্তব্ধতা। এরকম যাতে না হয়। শিক্ষা কোনো বইয়ের বোঝা নয়, শিক্ষা যেন আনন্দময় হয়।
উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, আগামী পোস্ট করোনা কার্যক্রমে পাঠদান, দক্ষ জনসম্পদ সৃষ্টিতে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। শিক্ষা প্রশিক্ষণে প্রাইভেট পার্টনারশিপের বিষয়ে অনেক সুযোগ আছে। এখানে ব্যাপক পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় মূল্যায়ন না করে ক্লাসে মূল্যায়ন করার চিন্তা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আমাদের উচিত মূল্যায়ন, পাঠদান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে দক্ষতা নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে আগানো।
তিনি বলেন, আমরা বিশাল জনগোষ্ঠীকে অনার্স ও মাস্টার্স দিচ্ছি, সেগুলোকে কীভাবে দক্ষতা নির্ভর করা যায়, দক্ষতা নির্ভর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছি। দক্ষতা নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে আমরা কাজ করতে চাই।
সান নিউজ/এসএ