শিক্ষা

মাতৃভাষায় বই আছে, শিক্ষক নেই

নিজ মাতৃভাষায় বই পাওয়ার পরও শিক্ষক সংকটে অধ্যয়নের সুযোগ পাচ্ছে না চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর শিশুরা।

মাতৃভাষায় বই পেয়েছে। পড়বে মাতৃভাষায়। ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষ হয়ে এ যেন এক পরম আনন্দের। কিন্তু সেই হাসিমাখা মুখ মুহুর্তেই মলিন হয়ে যায় যখন মনে মড়ে এই বই পড়ানোর মতো কোন শিক্ষক নেই তাদের স্কুলগুলোতে। মাতৃভাষায় বই আছে, শিক্ষক নেই

বাংলাদেশে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ ১১ ভাষাভাষী ১৩টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগোষ্ঠী বসবাস। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ঐতিহ্য। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তিতেও পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া রোধে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা পদ্ধতি চালুর কথা বলা হয়েছে। ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় পড়ালেখা করার সুযোগের কথা রইলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছিল না সহজে।

তবে ২০১৭ সালে প্রথম নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যপুস্তক পায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা। কিন্তু তখন থেকেই শিক্ষক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে সরকারের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম।

জেলা প্র্রশাসকের হিসেবে, খাগড়াছড়িতে ৪০ হাজার ৬শ’ নয়জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করা হয়েছে ৯১ হাজার ৮শ’ ৫৪টি বই। এত বিপুল সংখ্যাক শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছে মাত্র ৯০ জন।

বান্দরবানে ১৪ হাজার ১২ জন শিক্ষার্থীর মাঝে বই বিতরণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৯শ দুইটি বই। এতজন শিক্ষার্থীকে পড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছে মাত্র একশ’ ৪২জন।

রাঙ্গামাটিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৩০ হাজার ৭শ’ ৪৪ জন শিক্ষার্থীর মাঝে মাতৃভাষায় বই বিতরণ করা হয়েছে ৬৭টি হাজার ৭শ’ ৮টি। এদের পাঠদানের জন্য গত তিন বছরে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ১৪শ ৫১জন শিক্ষকে।

জেলা শিক্ষা অফিসার খোরশেদ আলম সান নিউজকে জানান, শিক্ষকদের ১০ থেকে ১৫ দিন করে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এত অল্প সময় প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি নতুন ভাষা পড়ানোর জন্য যথেষ্ট নয়। এবং এসব ভাষায় অভিজ্ঞ কোন শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, পর্যাপ্ত শিক্ষক ও প্রশিক্ষণের অভাবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ছাত্র-ছাত্রীরা এগিয়ে যেতে পারছে না। আগামীতে শিক্ষকদের আরও প্রশিক্ষণ এবং নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা হবে।

শিক্ষক সংকটে গত তিন বছরে নিজ মাতৃভাষায় পড়তে পাড়েনি অধিকাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিশু। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলন, নিজ মাতৃভাষায় বই থাকা সত্বেও পড়তে না পাড়া অত্যন্ত কষ্টের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্বত্য তিন জেলার জেলা প্রশাসকরা জানান, শিশুদের পাঠদানের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ধীরে ধীরে এ সংকট কেটে যাবে বলে আশা তাদের।

এদিকে ২০১৬ সাল থেকে ৬টি নৃগোষ্ঠীর ভাষার বই ছাপার উদ্যোগ নেয় সরকার। বর্তমানে ছাপা হচ্ছে তিনটি ভাষায়। বর্ণ জটিলতার কারণে ছাপা হয়নি অন্য ৩টি ভাষায় বই।

২০২০ সালে সারাদেশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রায় সোয়া চার কোট শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করা হয়েছে ৩৫ কোটি ৩১ লাখেরও বেশি বই।

২০১৯ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যন্ত চার কোটি ১৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৬৫ জন শিক্ষার্থীর হাতে দেয়া হয়ে অন্তত ৩৫ কোটি বই।

Copyright © Sunnews24x7

Newsletter

Subscribe to our newsletter and stay updated.

সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সমাজে এখনও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা যায়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল এ...

শপথ নিলেন আপিল বিভাগের দুই বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসে...

স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দিলেন ড. ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অ...

সাভারের সড়কে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

জেলা প্রতিনিধি: সাভারে ঈদের ছুটি ও বেতনের দাবিতে হেমায়েতপুর-...

ঈদে যৌথবাহিনীর টহল বৃদ্ধিসহ ১১ নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে সেনাবাহিনী, বিজি...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা