নিজস্ব প্রতিবেদক : স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যাবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ৭ বছর আগে করা আইন অনুযায়ী স্থায়ী ক্যাম্পাসে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে নির্দেশনা দেওয়ার পরও রাজধানীসহ আশেপাশের এলাকায় ভাড়া বাড়িতে চলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাসরীন মুক্তি স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকার পর কোনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া বাড়িতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে যেন না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে (ইউজিসি) নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে নাসরীন মুক্তি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যাল পরিচালনায় সাময়িক অনুমতিপত্রে বেশকিছু শর্ত দেয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো নিজস্ব জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তুলে সেখানে সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা। বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে গেলেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নজরে আসার পর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ইউজিসিকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকার পরও অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। আশুলিয়ায় প্রায় ৬০ একর জায়গা নিয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সেখানে বিশাল অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও এখনও শহরের অস্থায়ী ক্যাম্পাসগুলো বন্ধ করছে না ড্যাফোডিল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মুখপাত্র মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী সংখ্যা ও অবকাঠামো বিবেচনায় ড্যাফোডিল অনেক বড় আকারের বিশ্ববিদ্যালয়। এজন্য আমাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় বেশি সময় লাগছে।
বিশেষ করে আমাদের ল্যাবগুলো স্থানান্তরে বেশি সময় লেগেছে। তবে আমরা স্থানান্তর প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছি। এখন সব প্রোগ্রামের ভর্তি কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলছে। আগে যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের শিক্ষা কার্যক্রম অস্থায়ী ক্যাম্পাসে নেয়া হচ্ছে।
একইভাবে মোহাম্মদপুরে স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকা সত্ত্বেও ধানমন্ডির অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালাচ্ছে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব)। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সামসাদ মর্তুজা বলেন, আমাদের বেশির ভাগ কার্যক্রমই পরিচালিত হচ্ছে স্থায়ী ক্যাম্পাসে। অনার্স পর্যায়ের সব কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখন ভর্তি কার্যক্রম ও মাস্টার্সের কিছু প্রোগ্রামের কার্যক্রম ধানমন্ডিতে রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সর্বশেষ হালনাগাদকৃত তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের ৭৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয়ে যাওয়ার কথা। যদিও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করেছে মাত্র ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানান্তর প্রক্রিয়া সন্তোষজনক পর্যায়ে নেই।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে আমরা স্থায়ী ক্যাম্পাস ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষারমান যাচাই করছি। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকার পরও অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বর্তমানে দেশের অনুমোদিত মোট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৭টি। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে ৯৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন পায়নি। আর তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
সান নিউজ/এসএ