সাইফুল ইসলাম মাসুম : দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ১২২ বছরে পদার্পণ করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই এই অঞ্চলের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই অঞ্চলের বহু ইতিহাস আর ঐতিহ্যের স্বাক্ষী এই কলেজ।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এই কলেজের বহু শিক্ষার্থী অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধে এখানকার বহু শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছেন।
শিক্ষা-সংস্কৃতির বিকাশে বৃটিশ ভারতে প্রথম পর্যায়ে যে কয়টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়,ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ তার মধ্যে অন্যতম। গবেষক তিতাশ চৌধুরী লিখেছেন, ‘প্রাচীনত্বের বিচারে এই কলেজটি বুড়োদের দলেই পড়ে’। মূলত এই কলেজটিই ছিল এই অঞ্চলের অন্ধকার যুগের শিক্ষা-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। তবে পাকিস্তান সৃষ্টির পর এই কলেজের নাম পরিবর্তনের চেষ্টা চালানো হয়। ‘ভিক্টোরিয়া’ শব্দটি ছেঁটে ফেলে দেয়ার চিন্তা করা হয়। শেষ পর্যন্ত তা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি।
বর্তমানে কলেজটি দু’টি অংশে বিভক্ত। কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপার রানীদীঘির পাড়ে কলেজের এইচএসসি (ইন্টারমিডিয়েট) শাখা। আর ধর্মপুরে ডিগ্রি-অনার্স শাখা অবস্থিত।এ কলেজে বর্তমানে ২২টি বিষয়ে অনার্স ও ১৯টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। রয়েছে ১৩টি সক্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ২৮ জন শিক্ষার্থী শহীদ হন। শতাব্দীর প্রাচীন দক্ষিণ বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জ্ঞান বিস্তারের পাশাপাশি ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান সহ এদেশের মানুষের প্রতিটি আন্দোলনে একাত্ম হয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বাণিজ্য অনুষদের ৪র্থ বর্ষে ছাত্র শহীদ মো. জয়নাল আবেদীন বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীনতায় অবদান রেখেছে। বাঙালি জাতিকে পাকহানাদার বাহিনীর এ অমানবিক নির্যাতন, মানুষ হত্যা থেকে উদগীরণ করার জন্য কুমিল্লা শহরের ঢুলি পাড়া গ্রামের সন্তান এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র শহীদ এ.কে.এম. মোজাম্মেল হক মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি পাকহানাদার বাহিনীর হাতে কসবা থানার চারগাছ নামক স্থানে ১৯৭১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে শহীদ হন।
সাবেক সচিব মো. আবদুল আজিজ ১৯৭০ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ১৯৬৩ সালে এই কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে তিনি এই কলেজের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতাও করেন।
দেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, আমলা, বিচারপতি, রাজনীতিবিদ, মন্ত্রীসহ নানা পেশার নামজাদা অনেকেই এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সান নিউজ/এসএম