জিসান নজরুল, (ইবি) প্রতিনিধি: গবেষণার কাজে বিদেশে থাকা অবস্থায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আইন বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলামের শিক্ষা-ছুটি নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাতিলের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এছাড়া ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদনের ২ মাস পার হওয়ার পর ছুটি মঞ্জুর হয়নি বলে প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। এমনকি এক ১ মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও প্রশাসন তাকে অবগত না করেই বেতন বন্ধ করে দেয়। এতে বিপাকে পড়েছেন বলে দাবি ওই অধ্যাপকের।
আরও পড়ুন: বিসিএসের আবেদনের সময় বাড়ল
গতকাল বুধবার (২২ জানুয়ারি) রাত ১০ টায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলাম এসব অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে ড. জহুরুল বলেন, আমি ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ডেকোটায় ইন্সট্রাকশনাল ডিজাইন এন্ড টেকনোলজি বিষয়ে এমএস ২ বছরের ডিগ্রিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। তাই গত ২০২৩ সালের ১৭ মে ইবি ছুটি বিধির ২০(ক) এর ১ ও ৪ ও (ঘ) ধারা অনুযায়ী ১ বছরের জন্য সবেতনে শিক্ষা ছুটির আবেদন করি। বিধি অনুযায়ী শিক্ষা ছুটি সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে বিষয়টি এজেন্ডাভূক্তও হয়। তৎকালীন প্রশাসন আমার পিএইচডি ডিগ্রি থাকায় এম.এস ডিগ্রির জন্য ছুটি অনুমোদন করেনি। পরে আমি ১ বছরের জন্য স্যাবাটিক্যাল লিভের জন্য আবেদন করি এবং কর্তৃপক্ষ এ বছরের ৩০ জুলাই ‘স্যাবাটিক্যাল লিভ’ মঞ্জুর করেন। পরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রজেক্টে রিসার্চ অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে নিযুক্ত হওয়ায় ৯ আগস্ট স্যাবাটিক্যাল লিভের পরিবর্তে ছুটি বিধির ২০(৭) ধারা অনুযায়ী বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা প্রজেক্টে কাজের জন্য সবেতনে শিক্ষা ছুটির আবেদন করি এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট হতে ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত ১ বছরের সবেতনে শিক্ষা ছুটি মঞ্জুর করেন।
এছাড়া তিনি বলেন, পরে ২০২৪ সালে ২৭ জুলাই নিয়ম অনুযায়ী চলমান শিক্ষা ছুটির ১ বছর মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করি। পরে স্ট্যাডিং কমিটির সভায় বিষয়টি এজেন্ডাভূক্ত হয়। কিন্তু এই ছুটিটি মঞ্জুর একটি রুটিন ওয়ার্ক হওয়া সত্ত্বে ২ মাসের বেশী সময় পরে আমাকে পত্র দিয়ে ছুটি মঞ্জুর হয় নি মর্মে জানানো হয় এবং ১ মাসের মধ্যে কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়। এবং সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমাকে অবগত না করে আমার বেতন বন্ধ করা হয়। পরে গত ৩০ অক্টোবর বিষয়টি পুনঃ:বিবেচনার জন্য জন্য আবেদন করি। এবং উপাচার্য স্ট্যান্ডিং কমিটির এজেন্ডাভূক্ত করেন। কিন্তু গত ৯ ডিসেম্বর উপ-উপাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আমার আবেদন আলোচনারই সুযোগ দেওয়া হয় নি। আমি বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি মিটিং এর চেয়ার থেকেই এরূপ ভাষ্য দেওয়া হয়েছে যে, এটা একটা অবৈধ ছুটি, কীভাবে এই ছুটি দেওয়া হলো তা তদন্ত করতে হবে এবং যারা ছুটি দিয়েছেন তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনা হবে। আমি আশঙ্কা করছি আমার বিষয়ে যেকোনো ধরনের নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে প্রশাসন কুণ্ঠাবোধ করবেন না।
আরও পড়ুন: শাহবাগে ম্যাটস শিক্ষার্থীদের অবস্থান
এ বিষয়ে অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা ছুটি কোন অধিকার নয়, এটা সুবিধা। শিক্ষকগণের এই সুবিধা প্রদান করা হয় শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ৫ বছরের সবেতনে শিক্ষা ছুটির সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু আমার মাত্র ১ বছর ছুটি ভোগ যেন বিশাল অন্যায় হয়ে গেছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত ছিল বিদেশে উচ্চশিক্ষাকে উৎসাহিত করা। আমার বেতন বন্ধ করে দেওয়ার কারণে আমার পরিবার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. খন্দকার তৌহিদুল আনাম বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না, আমি এমন কিছুই শুনিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচাযের্র সাথে কথা বললে তারা কিছু জানেন না বলে জানান। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, এ বিষয়ে এখনই আমি কিছু বলতে পারব না। কেন ওনার ওনার ছুটি বাতিল হল তা ফাইল-পত্র খুঁজে দেখতে হবে। তবে ওনি ছুটির পাওয়ার যোগ্য হলে অবশ্যই ছুটি পাবেন।
সান নিউজ/এএন