নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে একযোগে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে দেশের দু’একটি বিশ্ববিদ্যালয় অনিহার কারণে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি হয়।
অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয়ভাবে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা নিতে সম্মত হয়েছে।
১২ ফেব্রুয়ারি বুধবার ইউজিসি চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক সভায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ইউজিসি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ইউজিসি চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহর বলেন, আমরা আশা করছি মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। ইউজিসি এ কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হবে। ভর্তি পরীক্ষা, পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয় যথাসময়ে জানানো হবে।
এর আগে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির উদ্যোগের এই ব্যবস্থার বিপরীতে অবস্থান নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ডাকসু সভাপতি উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠত কার্যনির্বাহী সভায় নিজস্ব পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু রাখার সুপারিশ করা হয়। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বুয়েটও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি এতদিন।
দুইদিন পর ইউজিসি চেয়ারম্যান এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের সিদ্ধান্তহীনতার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে গোটা জাতির আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ থাকতে পারে না। কারও ইগো যেন অন্যদের প্রভাবিত করতে না পারে সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।
এরপর মঙ্গলবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির ২৬২তম সভায় কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে একমত হন উপাচার্যরা। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েটের উপাচার্য ওই সভায় ছিলেন না। তবে বুধবার ইউজিসির সভার পর এই দুই প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তহীনতাও দূর হল।
এখন থেকে সমন্বিত ব্যবস্থায় বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখা থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির আলোকে প্রণীত পৃথক প্রশ্নপত্রে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কলেজগুলোর স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির জন্যও এই প্রক্রিয়া প্রযোজ্য হবে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয় বলে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হয়। একই বিষয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা দিতে তাদের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়।
এ ব্যবস্থার বদলে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এক দিনে এক পদ্ধতিতে নেওয়ার কথা ভাবছে সরকার, যাকে বলা হচ্ছে সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থী একবার পরীক্ষা দিলেই চলবে, প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে তাকে গুচ্ছে থাকা কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে, যেভাবে মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
উল্লেখ্য, এই প্রক্রিয়ায় ভর্তি পরীক্ষা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ একাধিকবার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে চলতি শিক্ষাবর্ষে সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপর গত ২৩ জানুয়ারি ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তখন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাগ্রহ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
সান নিউজ/সালি