নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী: করোনা সংক্রমণের বিস্তাররোধে গত মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে যায় মহাগরীর শিক্ষার্থী মেসগুলোও। কিন্তু মেসে না থেকেও এপ্রিল থেকে গত ছয়মাস ধরে সম্পূর্ণ ভাড়া গুণতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে।
মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ৪০ শতাংশ ভাড়া মওকুফের সিদ্ধান্ত নেন মেসমালিকরা। কিন্তু মাস পার হলেই ভাড়ার পুরো টাকা, এমনকি বিদ্যুৎবিলও দিতে হচ্ছে তাদের।
মেস ভাড়ার এই সমস্যা নিরসনে নানা আশ্বাস দিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও রাজশাহী জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন। কিন্তু ছয়মাস পার হলেও মেসমালিকদের দ্বিমুখী সিদ্ধান্তের কোনো সুরাহা করতে পারেননি তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে , বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৭টি হল মিলে মাত্র সাড়ে সাত থেকে আট হাজার শিক্ষার্থীদের আবাসিকতার সুযোগ রয়েছে। ফলে বাকি প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকেই বাইরে ভাড়া মেসে থাকতে হয়।
গত ১০ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, মেট্রোপলিটন পুলিশ ও রাজশাহী মহানগর মেসমালিক সমিতির যৌথ সভায় এপ্রিল মাস থেকে প্রত্যেক বোর্ডারকে স্ব স্ব ভাড়ার ৬০ শতাংশ দিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু মাস পার না হতেই সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে মেসমালিকরা নতুন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পুরো ভাড়াই দাবি করে বসেন।
ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে ৪০ শতাংশ ভাড়া মওকুফ না করে মেসমালিকরা সম্পূর্ণ ভাড়া আদায় করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে মেসে অবস্থান করা এসব শিক্ষার্থীকে।
রাবি শিক্ষার্থী মো. সাইফুল্লাহ বলেন, ‘সেই মার্চ মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। বাড়িতে থেকেও সম্পূর্ণ ভাড়া দিতে হচ্ছে, এটা অমানবিক। বিদ্যুৎ বিল বাবদ ১৫০ টাকাও দিতে হয়েছে আমাকে।’
শামিমা আশা বলেন, ‘৬-৭ মাস ধরে শুনছি, মেস ভাড়ার সুরাহা হবে। কিন্তু প্রতিমাসেই আমদের শতভাগ ভাড়াই দিতে হচ্ছে। এটার কি আসলেই কোনো সমাধান নেই?’
বিনোদপুর বিসমিল্লাহ টাওয়ারে অবস্থানরত মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, ‘ম্যানেজার সরাসরি বলেছেন, ফুল ভাড়া দেওয়া লাগবে মেসের মালিকের নির্দেশে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমরা। একবারে ২০ হাজার টাকা দেওয়া কি আদৌ সম্ভব? বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এর সুরাহা চাই।’
আরেক শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাতমাসে ভাড়া সাত হাজার টাকা হবে। মেস মালিক বলছেন, একমাসের ভাড়া বাদে বাকি সব মাসের ভাড়া পরিশোধ করতে। কতো নিষ্ঠুর, নির্দয়, অমানবিক! আমি অবশ্য আড়াই টাকা দিয়েছি। বাকি ভাড়াটাও চাচ্ছেন।’
লিনা মঞ্জিলা আনিকা বলেন, ‘আমি এর মধ্যে মেসে গিয়েছিলাম, সবকিছু ঠিক আছে কি না দেখতে। এ সময় মেসমালিক বলেন, ‘ফুল পেমেন্ট না দিলে কিছু দেখতে দেবেন না। আমি বললাম, কিছু টাকা দেবো। তিনি বলেন, আগে পেমেন্ট, তারপর দেখবা। আসলেই কি আমরা মেসমালিকদের কাছে জিম্মি?’
শুভ্রদ্বীপ বলেন, ‘মেসে ফুল ভাড়া না দিলে সিট বাতিল হতে পারে, এ আশঙ্কায় ফুল ভাড়া না দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। মেসে না থেকেও ফুল ভাড়া দেওয়া অমানবিক, তার ওপর এতোটা লম্বা সময়ের জন্য। আর বন্ধ তো বাড়ছেই। ভাড়াও গুণতে হবে সেই অনুসারে। এর সমাধান চাই।’
মেসমালিক সমিতির সভাপতি মো. এনায়েতুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা এপ্রিল এবং মে মাসের সম্পূর্ণ ভাড়া পরিশোধ করবেন। জুন মাসের ভাড়া অসচ্ছল ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় মওকুফ করা হবে। জুলাইয়ের পর থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থী অর্ধেক ভাড়া পরিশোধ করবেন। তবে, সিট ছেড়ে দিলে পুরো ভাড়াই পরিশোধ করতে হবে শিক্ষার্থীদের।’
নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো মেসমালিক ৫০ শতাংশ মওকুফ না করলে কি পদক্ষেপ নেবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থীর কাছে কোনো মেসমালিক জুলাইয়ের পর থেকে সম্পূর্ণ ভাড়া দাবি করলে আমাদের সমিতিতে যোগাযোগ করলে ৫০ শতাংশ মওকুফ করে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষার্থীর এসব সমস্যা সমাধান করা হয়েছে।’
রাবি প্রক্টর বলেন, ‘আগে বিনোদপুর ও মেহেরচণ্ডি নিয়ে একটি মেসমালিক সমিতি ছিল। এ কারণে দ্রুতই রাবি শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলোর নিরসন করা সম্ভব ছিল। বর্তমানে মহানগর মেসমালিক সমিতির আওতায় সবাই। এজন্য অনেক বিষয়েরই সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও শিক্ষার্থীদের প্রতি এ অমানবিকতাকে মেনে নেওয়া যায় না। রাবি প্রশাসন শিগগিরই রাসিক মেয়রের মাধ্যমে এ সমস্যার নিরসনে মেসমালিকদের সঙ্গে আলোচনা করবে।’
সান নিউজ/ এআর