মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: সারাদেশে সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কার, ছাত্রদের উপর হামলা, হত্যার প্রতিবাদে মুন্সীগঞ্জ শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে বিচারের দাবিতে ব্যানার নিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হন। এ সময় তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। পাশ্ববর্তীতে বেলা ১১ টার দিকে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনের গায়েবানা জানাজা নামাজে দাঁড়ায় বিএনপির (২০-৩০) জন নেতাকর্মী।
বুধবার (১৭ জুলাই) সকালে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত ২
নামাজ শুরু হতেই পুলিশ সেখান থেকে শহর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব মাহবুবুল আলম স্বপন ও মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান হিরণকে আটক করে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের মত করে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। একপর্যায়ে শহরের প্রধান সড়কে যানচলাচল বন্ধ করে শিক্ষার্থীরা বসে পড়েন।
পাশের একটি মার্কেটের সামনে শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাত হোসাইন সাগরের নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হন। সেখানে স্লোগান দিতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। শিক্ষার্থীরাও বিক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা স্লোগান দিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্রিকেট খেলায় ব্যবহৃত স্ট্যাম্প, কাঠের ডাসা নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর করতে থাকে। একই সময় পুলিশও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মারধর করে৷ এতেই ১০ জন সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হয়।
আরও পড়ুন: সকল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি শুরু হলে পাশে বিএনপির নেতাকর্মীরাও জড়ো হন। এ সময় তারা গায়েবানা জানাজা নামাজ শুরু করেন। পুলিশ ২ বিএনপি নেতাকে আটক করে। শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বিষয়ে (ওসি) আরও বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালালে পুলিশ তাদের রক্ষা করে।
অন্যদিকে, মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা সেতু উত্তর থানার সামনে বিক্ষোভ মিছিল শেষে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এসময় পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত-সেতুতে যান চলাচল ব্যাহত হয়। প্রায় ৪০ মিনিট পর বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড কাঁদানেগ্যাস ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে পুলিশ। বুধবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে পদ্মা সেতু উত্তর থানার সামনে এসব ঘটনা ঘটে। একইসময় মুন্সীগঞ্জ শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে অন্তত ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন।
পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে দশটার দিকে পদ্মা সেতু উত্তর থানার সামনে দুইশতাধিক শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে জড়ো হন। এসময় তারা পদ্মা সেতুর উত্তর থানার সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে বসে পড়ে। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে বাকবিতন্ডা-ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশ এসময় আন্দোলনরত ২ শিক্ষার্থীকে আটক করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশকে ধাওয়া দেয়। পরে পুলিশ থানার ভেতরে গিয়ে অবস্থান নেন। সে সময় থানাকে লক্ষকরে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ থানা থেকে বের হয়ে কাদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে সড়ক থেকে সড়িয়ে দেয়। দুপুর ১২ টার দিকে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসলে আবারো যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের মুক্ত করলেন ৪ শিক্ষক
মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) জিয়াউল হায়দার বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা পদ্মা সেতু উত্তর টোল প্লাজার মুখে খানবাড়ি এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করে৷ এ সময় ১০-১২ মিনিট সেতুতে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। পরে পুলিশ যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার আসলাম খান বলেন, পদ্মা সেতু উত্তর থানার সামনে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা বিশৃঙ্খলা করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে করে। ঘটনাস্থল থেকে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। মহাসড়কের কোথাও যাতে পুনরায় বিশৃঙ্খলা না ঘটে সে বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
সান নিউজ/এমএইচ