আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার উচ্চ মাধ্যমিক শাখার ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক বুলবুল আহম্মদ দীর্ঘ ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে কর্মস্থলে অনিয়মিত। অথচ হাজিরা খাতায় রয়েছে উপস্থিতির স্বাক্ষর, নিচ্ছেন বেতন-ভাতা।
আরও পড়ুন: পাওয়ার ট্রিলার চাপায় শিশুর মৃত্যু
সরেজমিনে মাদ্রাসায় গিয়ে মিলেছে এমন তথ্য। অভিযুক্ত শিক্ষকের উপস্থিতি স্বাক্ষরের হাজিরা খাতায় দেখা যায় প্রশ্নবোধক চিহ্ন ও স্বাক্ষর একসাথে রয়েছে। বেতন বিলের সিটেও নিয়মিত দেয়া আছে স্বাক্ষর। সেই বিল ভাউচারের মাধ্যমে প্রতি মাসের বেতনও তুলছেন সেই শিক্ষক।
অথচ মাদ্রাসার সুপার ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি সম্পূর্ণ অবগত থাকলেও কি কারণে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি এবং কেন নিরব রয়েছেন, মাদ্রাসা কতৃপক্ষের কাছ থেকে এর কোনো সদুত্তর মেলেনি।
জান গেছে, তবলছড়ি ফাজিল মাদ্রাসার উচ্চ মাধ্যমিক শাখার ইংরেজি বিভাগের অভিযুক্ত শিক্ষক বুলবুল আহম্মদ গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে এ মাদ্রাসায় যোগদান করেন। তার শিক্ষক ইনডেক্স নাম্বার (M0032015)।
এর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে প্রথমে এক বছর নিয়মিত থাকলেও পরের বছর থেকে অনিয়মিত রয়েছেন তিনি। অথচ পুরো মাসের উপস্থিতি স্বাক্ষর একদিনে করে নিয়মমাফিক মাসের প্রথম দিকে এসে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলে নিয়ে যান।
আরও পড়ুন: মেঘনা নদীতে পাঙ্গাশ রক্ষায় অবৈধ চাই ধ্বংস
অভিযুক্ত শিক্ষক তার নিজ জেলা ফরিদপুরে “আইডিয়াল ট্রেনিং সেন্টার” নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন, সেই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের ভাষা শিক্ষার একটি কোচিং সেন্টারের শেয়ারহোল্ডার তিনি। সেখানে সময় দিতে গিয়ে মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকেন বলে জানা যায়।
মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাটি এফতেদায়ী থেকে পর্যায়ক্রমে দাখিলে উন্নীত হয়ে ১৯৯৭ সালে দাখিল ও ২০২২ সালে আলিম পর্যায় এমপিও ভুক্ত হয়। একই সাথে ২০২২ সালে ফাজিল (ডিগ্রি) পাঠদানের অনুমোদন পায়।
প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষক স্বল্পতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এফতেদায়ী (প্রাথমিক) থেকে ফাজিল (ডিগ্রি) পর্যন্ত মোট শিক্ষক-কর্মচারীসহ রয়েছেন মাত্র ১৫ জন, যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ৬টি বিষয়ের শিক্ষকের পদ শুণ্য রয়েছে, যা সামাল দিতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
মাদ্রাসায় না এসে, ক্লাস না নিয়ে কীভাবে নিয়মিত বেতন-ভাতা পান জানতে চাইলে মাদ্রাসার সুপার সাইফুল ইসলাম নিজামী স্বীকার করেন, দীর্ঘ দিন ধরে আলিম (উচ্চ মাধ্যমিক) শাখার ইংরেজি শিক্ষক বুলবুল আহম্মদ মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন।
আরও পড়ুন: ২ ইউপিডিএফ সদস্যকে গুলি করে হত্যা
এ ব্যাপারে তাকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। সর্বশেষ কয়েকদিন আগে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে কোনো লিখিত প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
মাদ্রাসার অভিযুক্ত শিক্ষক বুলবুল আহম্মদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার পারিবারিক সমস্যার কারণে মাদ্রাসা প্রধান ও পরিচালনা কমিটির অনুমতি নিয়ে আমি মাদ্রাসায় অনিয়মিত রয়েছি।
ফরিদপুরে “আইডিয়াল ট্রেনিং সেন্টার”র শেয়ারের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, কয়েকজন বন্ধু মিলে ট্রেনিং সেন্টারটি করেছি। তবে এটার সাথে মাদ্রাসায় অনুউপস্থিতির কোনো সম্পর্ক নেই। ট্রেনিং সেন্টার চালানোর জন্য অন্য শেয়ারহোল্ডাররা রয়েছেন।
মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি সোলেইমান লিডার জানান, তাকে এর আগে বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। শোকজও করা হয়েছে। তিনি কোনো কর্ণপাত করেননি। তারপরও যদি তিনি না শোধরান, তাহলে নিয়মানুযায়ী তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন: ট্রাক উল্টে ২ শ্রমিক নিহত
মাটিরাঙ্গা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শরিফুল ইসলাম বিদ্যুৎ জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য বেলাল হোসেন সাংবাদিককে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে নিউজ করে কোন লাভ হবে না। বরং আপনি উল্টো বিপদে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিক্ষক না থাকলেও প্রতিদিন হাজিরা ঠিকই হয়ে যায়। বুঝতেই পারছেন এ ঘটনার পিছনে কারা রয়েছে।
তবলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে খোঁজখবর নিয়ে যদি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সান নিউজ/এনজে