নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঝালকাঠি: ঝালকাঠি শহরের সুগন্ধা পৌর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ভেঙে ও খেলার মাঠ নষ্ট করে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের অভিযোগে মামলা করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ম্যানেজিং কমিটির সদ্য বিদায়ী সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমি কেকা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হবে।
তবে ঝালকাঠি পৌরসভা ইতোমধ্যে নির্মাণাধীন অবৈধ মার্কেটটি ভেঙে দিয়েছে।
শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় বিদ্যালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রধান শিক্ষক রীতা মণ্ডল ও ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি গাজী সানাউল হক। সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে অবৈধ রেজুলেশন বানিয়ে দ্রুতগতিতে শহীদ মিনার ভেঙে শারমিন মৌসুমি কেকা মার্কেটের দোকানঘর নির্মাণ শুরু করেন বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমাকে চাপে রেখে শারমিন মৌসুমি কেকা তার ব্যবসায়িক সহযোগী বিএনপি নেতা আনিসুর রহমান তাপুকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতেন। তাপু টেবিলে বসে একটি পিস্তল বের করে ভয় দেখাতেন। গত ১৪ আগস্ট শহীদ মিনার ভেঙে মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করলেও ভয়ে শিক্ষকরা কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি। এরই মধ্যে ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নতুন ম্যানেজিং কমিটি এসে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।’
‘বিষয়টি জানতে পেরে পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের পরিকল্পনা (প্ল্যান) বাতিল করে নির্মাণাধীন দোকানগুলো ভেঙে ফেলে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কেকা বিদ্যালয়, নতুন কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন।’
আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই বিদ্যালয় মাঠেই নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধান শিক্ষক। শহীদ মিনার ভাঙার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যালয়ের অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গাজী সানাউল হক অভিযোগ করেন, শারমিন মৌসুমি কেকা স্থানীয় সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর সুনাম ক্ষুণ্ন করে নানা ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছেন। বিষয়টি সংসদ সদস্য জানতে পেরে প্রধান শিক্ষক রীতা মণ্ডলকে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। এ কমিটিতে থাকতে না পেরে কেকা স্কুলের ক্ষতি করতে উঠে-পড়ে লেগেছেন।
ঝালকাঠি শহরের সার্কিট হাউস সংলগ্ন প্রধান সড়কের পাশে গুরুধাম এলাকায় ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সুগন্ধা পৌর আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে এখানে ৪৭৫ জন ছাত্রী পড়ালেখা করে। পাশেই রয়েছে মিলন মন্দির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানেও প্রায় ৩৪০ জন ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে। দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় পূর্ব সমাবেশ (অ্যাসেম্বলি), বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবস ও ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডের জন্য রয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার বর্গফুটের খেলার মাঠটি। মাঠের পশ্চিম প্রান্তে ছিল শহীদ মিনারটি।
গত ১৪ আগস্ট শারমিন মৌসুমি কেকা খেলার মাঠের প্রায় ২০০০ বর্গফুট জায়গায় দশটি দোকান নিয়ে মার্কেটের নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
কেকা একটি রেস্তোঁরায় গত ১০ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্ত অনুসারে দোকান নির্মাণ করা হচ্ছিল। প্রধান শিক্ষক যদি রাজি না থাকেন, তাহলে কোনোভাবেই নির্মাণ শুরু হতো না। তারা সবাই মিলে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন।
সান নিউজ/ এআর