নিজস্ব প্রতিবেদক
বেনাপোল (যশোর): শার্শা-বেনাপোল সীমান্তে মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালানে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন নারী পাচারকারীরা। গত ১৬ দিনে পাচারে সরাসরি জড়িত নয় নারীকে হাতে-নাতে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বিজিবি ও পুলিশ সূত্র বলছে, শার্শা-বেনাপোল সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় এ পথে পুরুষের পাশাপাশি নারী পাচারকারীর সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। অল্প সময়ে বেশি অর্থের লোভে এসব মাদক ও স্বর্ণ পরিবহনে পাচারকারীর খাতায় নাম লেখাচ্ছেন নারীরা। অনেকে নারী গডমাদারদের খপ্পরে পা দিয়েও অল্প দিনে কোটিপতি হওয়ার আশায় জড়িয়ে পড়ছেন পাচার কাজে।
গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় পাচারকারীরা আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হয়ে এসে আবারও গডফাদারদের প্রলোভনে জড়িয়ে পড়ছেন পাচারকাজে।
শার্শা-বেনাপোল সীমান্তের কায়বা, রুদ্রপুর, গোগা, অগ্রভুলাট, পাঁচভুলাট, শালকোনা, পাকশি, ডিহি ও গোড়পাড়া এবং বেনাপোলের পুটখালী, দৌলতপুর, গাতিপাড়া, সাদিপুর, রঘুনাথপুর, ঘিবা ও ধান্যখোলা সীমান্তে পাচারকারীরা অনেক বেশি সক্রিয়। আর সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় পাচারকারীরা এসব রুটকে বেছে নিচ্ছেন।
গত বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকালে বাগআঁচড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ শার্শার রাড়িপুকুর গ্রাম থেকে পানি ভর্তি কলসিতে করে ফেনসিডিল বহনের সময় রিপন হোসেনের স্ত্রী কাকলী বেগমকে (২৬) ১৩ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে।
একইদিন যশোরের অভয়নগর উপজেলার গুয়াখোলা (মডেল স্কুল রোড) ইকবালের স্ত্রী পারভীন বেগম বুলু (৩০) ও কোতোয়ালি থানার নরেন্দ্রপুর (রুপদিয়া) গ্রামের আ. আজিজ খানের মেয়ে রোকেয়া খাতুনকে (২০) দুই কেজি গাঁজাসহ আটক করে পোর্ট থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (০৮ সেপ্টেম্বর) রাতে শার্শার
সাতক্ষীরা-নাভারণ সড়কের আমতলা এলাকা থেকে বাগআঁচড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার সাতপুর গ্রামের শুভ আহমেদের স্ত্রী জুলেখা বেগম (২৫) ও একই গ্রামের আব্দুল্লাহর স্ত্রী আকলিমা খাতুন খাদিজাকে (২৬) ১১০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে। তারা বেনাপোল পোর্ট থানার তালসারী গ্রামে বসবাস করতেন।
গত ৬ সেপ্টেম্বর সকালে বেনাপোল পৌর এলাকার ভবেরবেড় গ্রাম থেকে বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ যশোরের কোতোয়ালি থানার নরেন্দ্রপুর (আমড়াতলা) এলাকার আ. আজিজের মেয়ে মনি (৩৭) ও বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের আইয়ুব আলী শেখের মেয়ে ফাতেমা খাতুনকে (২৫) তিন কেজি গাঁজাসহ আটক করে।
৫ সেপ্টেম্বর রাতে শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া সাতমাইল এলাকার আমতলা থেকে বাগআঁচড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ একাধিক মামলার আসামি রিজিয়া বেগম তানিয়াকে (৪২) সাত বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে।
গত ২৮ আগস্ট রাতে বেনাপোল পোর্ট থানার সাদিপুর সীমান্ত থেকে ওই গ্রামের দুখে মিয়ার স্ত্রী বানেছাকে (৪৫) ৫৭ পিস (৯ কেজি ২০০ গ্রাম) স্বর্ণের বারসহ আটক করেন বিজিবি সদস্যরা।
শার্শার বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কবির বলেন, ‘নারীদের মাদকসহ বিভিন্ন পাচারে যুক্ত থাকা সত্যিই দুঃখজনক। বুঝে হোক আর না বুঝে হোক এই পাচারে জড়িত হলে তাদের এ পেশা অবিলম্বে ত্যাগ করা উচিত।’
শার্শার বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমি এই ফাঁড়িতে যোগদানের পর থেকে যতো মাদকদ্রব্য ও বহনকারী যানবাহন জব্দ হয়েছে, তা অন্য সময় হয়নি। দেশে যেন মাদকদ্রব্য ঢুকতে না পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম খান বলেন, ‘আমরা মাদক জব্দের পাশাপাশি যারা এ ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট, তাদের চিহ্নিত করে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোনো মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের মদদদাতাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান বলেন, ‘আমি বেনাপোল পোর্ট থানায় যোগদানের পর থেকে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। মাদক ব্যবসায়ীদের কোনো ছাড় নেই। মাদক ব্যবসায়ীদের পক্ষে কেউ সুপারিশ করলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না।’
৪৯ বিজিবি বেনাপোল সদর ক্যাম্পের সুবেদার হান্নান মিয়া বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। যদি মাদক ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বেশি থাকে, তবে তা নির্মূল করা হবে। কোনো মাদক ব্যবসায়ীকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
সান নিউজ/ এআর