নিজস্ব প্রতিবেদক :
নিজেকে কখনো সাংবাদিক, কখনো কবি কিংবা লেখক পরিচয় দিতেন লুপা তালুকদার ওরফে লুপা বেগম। পুরো নাম নূর নাজমা আক্তার লুপা। আবার নিজেকে জাহির করতেন আওয়ামী পেশাজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে ফুল বিক্রেতা শিশু জিনিয়াকে অপহরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার লুপা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত-সমালোচিত নাম। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে রেহাই পেয়েছেন হত্যা মামলা থেকেও।
লুপাকে রিমান্ডে নিয়ে তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার ওয়ালিদ হোসেন।
ক্যাসিনো সম্রাট, পাপিয়া, প্রতারক সাহেদ, সাবরিনার পর অপহরণকারী লুপা তালুকদার দেশজুড়ে আলোচিত নাম। টিএসসি থেকে শিশু অপহরণের ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ভাসছে তার কীর্তিকলাপে। বাবা হাবিবুর রহমান তালুকদার ওরফে নান্না তালুকদার পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ৩১ সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীর নামের মধ্যে ১১ নম্বরে হলেও লুপা ও তার পরিবার এখন ক্ষমতাসীন দলের দাপুটে নেতা।
লুপার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পরিচয় তিনি আওয়ামী পেশাজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ‘অগ্নি টিভি’ নামে একটি টেলিভিশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। কখনও সাংবাদিক, কখনও মানবাধিকার কর্মী, কবি-সাহিত্যিক যখন যা দরকার তাই পরিচয় দিতেন।
এসব পরিচয়ের সুবাদে যোগাযোগ ছিল রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে। রাখতেন তাদের সংগে নিজের ছবিও। কাজে লাগাতেন সুযোগ মতো।
এলাকার মানুষকে দাদন ও সুদের ব্যবসার ফাঁদে ফেলছেন নানা কৌশলে। থানা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে লুপা তালুকদার ও তার বড় ভাই লিংকন তালুকদার এসব করতেন। স্থানীয়রা বলেন, এরা কোনোদিনই আওয়ামী লীগ করেনি, এরা রাজাকার পরিবারের লোক।
অভিযোগ আছে ক্ষমতাসীন দলের দাপটে ২০০৩ সালে তিনি ও তার দুই ভাই ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহপরিচারিকা শাহিনুর বেগম ও তার শিশু কন্যার হত্যা মামলা থেকে রেহাই পান।
শাহিনুর বেগমের মা বলেন, লুপা ও তার ২ ভাই মিলে আমার মেয়ে শাহিনুর বেগমকে হত্যা করেছে।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, লুপা দলের কেউ নন। ব্যক্তি স্বার্থেই দলকে ব্যবহার করেছেন। যখনই অভিযোগ আসছে তখনই আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছি এ ধরনের মানুষকে চিহ্নিত করতে। এরা বঙ্গবন্ধুর নাম কিংবা আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে এধরনের ভুঁইফোড় সংগঠন তৈরি করে শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করার জন্য। আমাদের কমিটি গঠনের কাজ চলমান রয়েছে। আমরা অনেক সতর্ক আছি এবার কমিটিতে পদ দেয়ার ক্ষেত্রে।
উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মো. ওয়ালিদ হোসেন বলেন, শিশু অপহরণসহ তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে আমরা এতটুকু নিশ্চিত শিশুটিকে অপহরণের পেছনে তার ভালো কোনও উদ্দেশ্য ছিল না।
সান নিউজ/আরএইচ/ এআর