নিজস্ব প্রতিবেদক:
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তার হওয়া ইউএনওর বাসার সাবেক মালি রবিউল ইসলাম ফরাস। তার দেওয়া তথ্যমতে এই হামলায় ব্যবহৃত হাতুড়ি এবং মই জব্দ করা হয়েছে।
মালি রবিউলের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ জানায়, তার বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিজোড়া গ্রামে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রবিউল ইসলাম ফরাস ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে গত বছরের শেষে অস্থায়ী মালি হিসেবে নিয়োগ পান। চার মাস আগে মালি রবিউল ইউএনও ওয়াহিদার বাসা থেকে একটি লাগেজ তার কার্যালয়ে পৌঁছে দেওয়ার সময় সেখান থেকে ৫০ হাজার টাকা খোয়া যায়। এই ঘটনাটি ইউএনও ওয়াহিদা জেলা প্রশাসককে জানালে জেলা প্রশাসক মালি রবিউল ইসলাম ফরাসকে সাময়িক বরখাস্ত করে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
সেই ক্ষোভে তিনি ইউএনও ওয়াহিদাকে হত্যা করতে হামলা চালান বলে স্বীকার করেছেন মালি রবিউল।
শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন রংপুর রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য।
তিনি জানান, সিসিটিভির ফুটেজ এবং সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার ঘটনার বিবেচনায় মালি রবিউল ইসলাম ফরাসকে বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরে স্বীকারোক্তিতে তিনি ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, ইউএনও ওয়াহিদা খানম হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওসি ইমাম আবু জাফরসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গত ০২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত আড়াইটায় সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা ও তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ইউএনওর মাথায় গুরুতর আঘাত এবং তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়।
পরে ইউএনও ও তার বাবাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। ওয়াহিদার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে আনা হয়। রাতে তার মাথায় অস্ত্রোপচারের পর থেকে আইসিইউতে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে থাকার পর সোমবার দুপুরে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওয়াহিদা খানমের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে এখন ভালো এবং স্থিতিশীল। তার বাবা ওমর আলী শেখ এখনো রমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় ইউএনওর ভাই শেখ ফরিদ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে ঘোড়াঘাট থানায় হত্যাচেষ্টার মামলাটি করেন। এই মামলায় আরও তিনজন মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে ও কয়েকজনকে আটক করে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাদের মধ্যে প্রধান আসামি আসাদুলকে সাতদিনের রিমান্ড শেষে আজ শনিবার আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে। গতকাল শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) অন্য দুই আসামি নবীরুল ও সান্টুকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাদেরকেও সাতদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
সর্বশেষ গ্রেপ্তার হওয়া মালি রবিউল ইসলাম ফরাসকে শনিবার বিকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসমাইল হোসেনের আদালতে হাজির করে দশদিনের রিমান্ড চেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা ডিবি পুলিশ।
ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় শুক্রবার প্রত্যাহারকৃত ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলামকে পুলিশ লাইন্সে রাখা হয়েছে। তার স্থলে ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রংপুর সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. আজিম উদ্দিনকে।
সান নিউজ/ আরএইচ/ এআর | Sun News