সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম রিপন ও তার পরিবার
অপরাধ

‘রিয়াজ হত্যা মামলা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করছে পুলিশ’

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বরিশাল: বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের রাজধর গ্রামের দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজ হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন তার বড় ভাই ও মামলার বাদী মনিরুল ইসলাম রিপন। মামলাটির তদন্ত ও এর অগ্রগতির প্রশ্নে বেশ কিছু অসঙ্গতি এবং পুলিশের বিরুদ্ধে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে আদালতের অনুমতি ছাড়াই হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে পক্ষপাতহীন তদন্তের দাবিও জানান তিনি।

সোমবার (০৭ সেপ্টেম্বর) বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে বাদী অভিযোগ করেন, প্রায় দেড় বছরেও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। এ পর্যন্ত তিনবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু অগ্রগতি শূন্য। ফলে সুষ্ঠু বিচার নিয়ে সন্দিহান তারা।

বাদীর অভিযোগ, পুলিশ একতরফাভাবে আসামিপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। কিন্তু তার সঙ্গে কথা বলা তো দূরের কথা, তদন্তকারী কর্মকর্তা ফোনই ধরেন না।

মনিরুল ইসলাম রিপন বলেন, তার ভাই নিহত রিয়াজ দুটি বিয়ে করেছিলেন। এর মধ্যে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ১০ বছর সংসার করেছেন। কিন্তু কোনো সন্তান জন্ম নেয়নি। দ্বিতীয় বিয়ের চার বছরেও কোনো সন্তান রিয়াজের ঔরসে জন্ম হয়নি। কিন্তু রিয়াজ খুন হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত রিয়াজের দ্বিতীয় স্ত্রী লিজা আক্তার কারান্তরীণ থেকেও সন্তান জন্ম দেন, যা সন্দেহজনক। তাছাড়া মামলার শুরুতে পুলিশের কাছে লিজা স্বীকার করেছেন, তিনি পরকীয়ায় আসক্ত এবং তার পরকীয়া প্রেমিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। অন্য এক ব্যক্তি মিলে রিয়াজকে গলা কেটে হত্যা করে। হত্যার পর থেকে রিয়াজের সহকারী মাসুম ও হাবীব পলাতক।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহতের আরেক ভাই মঞ্জুরুল ইসলাম রুবেল, খালাতো ভাই শাখাওয়াত সিকদার ও সিদ্দিক, ভাগ্নে আসিফ হাওলাদার ও বাদীর স্ত্রী রেবেকা সুলতানা।

গত বছরের ১৮ এপ্রিল মধ্যরাতে দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজ ও তার স্ত্রী লিজার শয়নকক্ষে রিয়াজকে গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কোতোয়ালি থানা পুলিশ পরদিন রিয়াজের মরদেহ উদ্ধার এবং তার স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজাকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন রিয়াজের ভাই রিপন কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেন। জিজ্ঞাসাবাদে লিজা স্বীকার করেন, তার স্বামীর সহকারী পরকীয়া প্রেমিক মাসুম হোসেন দা দিয়ে কুপিয়ে ঘুমন্ত রেজাউলকে হত্যা করেন। এ সময় তার অন্য সহকারী হাবিব বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরেন। এর আগে তিনি (স্ত্রী) রিয়াজকে হত্যার উদ্দেশ্যে ১৬টি ঘুমের ওষুধ কৌশলে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে রাখেন, যা খেয়ে বেহুশ হয়ে পড়ে রিয়াজ। ওই অবস্থায়ই কুপিয়ে খুন করা হয় রিয়াজকে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিমের তত্ত্বাবধানে পরিদর্শক ছগির হোসেনকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

নিহতের ভাই রিপন সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, কারাগারে বসে লিজার গর্ভে যে সন্তান জন্ম নিয়েছে, তা রিয়াজের নয়। ওই সন্তান তার পরকীয়া প্রেমিক মাসুম হোসেনের। প্রকৃত পরিচয় শনাক্ত করতে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) পরীক্ষা করালেই এর সত্যতা মিলবে।

‘হত্যার আসল ঘটনা উদঘাটনেও সদিচ্ছা নেই পুলিশের। কারণ, কয়েকদিন আগে তিনজন ছিঁচকে চোর ধরে এনে আদালতে সোপর্দ করে তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক সগির হোসেন দাবি করেন, রিয়াজ হত্যায় ওই তিন চোর জড়িত। অথচ, খুনের পর গ্রেপ্তার হওয়া নিহত রিয়াজের স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজা ১৬৪ ধারায় স্বীকার করেছেন, তার পরকীয়া প্রেমিক মাসুম হোসেন ও হাবিব খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। কিন্তু ঘটনার এতোদিন পরেও অভিযুক্ত পরকীয়া প্রেমিক মাসুম হোসেন ও হাবিবকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।’

বাদী বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা শুরু থেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না এবং ফোন করলেও তা রিসিভ করেন না। আমার কাছ থেকে কোনো তথ্যও নিচ্ছেন না। দীর্ঘদিনেও তারা লিজার স্বীকারোক্তি অনুসারে আসামি মাসুম ও হাবিবকে ধরতে সক্ষম হয়নি। কিন্তু হঠাৎ করে কয়েকদিন আগে তিন ছিঁচকে চোরকে আটক করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ছগির হোসেন। পুলিশ এখন বলছে, আটককৃত চোররা নাকি জবানবন্দিতে রিয়াজকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। অথচ তিনজনের জবানবন্দি তিন রকম। কারও কথার সঙ্গে কারও মিল নেই। তাই আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পুলিশ যে মোবাইলের কারণে তিন ছিঁচকে চোরকে আটক করেছে, তারা আদৌ আমার ভাইয়ের হত্যার সঙ্গে জড়িত নন।’

তিনি বলেন, ‘জন্ম নেওয়া সন্তানের দায়িত্ব কে নেবেন, সেই সিদ্ধান্ত আদালতের দেওয়ার কথা। অথচ অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম আমার মামা আব্দুল হাই মন্টু ও ভাগ্নে আসিফ হাওলাদারকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া লিজার সন্তানের ভরণ-পোষণ দেওয়ার নির্দেশ দেন। লিজার মালপত্র বুঝিয়ে দিতেও বলেন। আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো নির্দেশ পুলিশ দিতে পারে না। মূলত পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করছে। এমন আচরণ করলে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত হতে পারে।’

মামলার বাদী অভিযোগ করেন, লিজা সন্তানের দোহাই দিয়ে ৮ মাস আগে জামিন নেন। জামিনের পরে কখনও বলেননি যে, পুলিশের নির্যাতনের মুখে মিথ্যা জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু তিন চোর আটক হওয়ার পরই লিজা দাবি করছেন, পুলিশের নির্যাতনের কারণে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাদী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। লিজা জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকেই আমাকে ও আমার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। এমনকি সম্প্রতি আমার ভাগিনা আসিফকে বাজার রোড এলাকায় প্রকাশ্যে গালাগাল ও মারধর করে। অমি এই মামলার সুষ্ঠু বিচার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছি। পুলিশ মামলাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে।’

সান নিউজ/ এআর | Sun News

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বন্ধ করা হবে অবৈধ ইটভাটা

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এব...

মোদী-ইউনূসের বৈঠক হচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রে 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এই...

চালু হচ্ছে কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশন 

নিজস্ব প্রতিবেদক: কাল থেকে চালু হচ্ছে মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স...

আগস্টে সড়কে নিহত ৪৭৬

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে গত আগস্ট মাসে ৪৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনা...

পালানো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি : গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে পালানো মৃত্...

বন্ধ করা হবে অবৈধ ইটভাটা

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এব...

মোদী-ইউনূসের বৈঠক হচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রে 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এই...

চালু হচ্ছে কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশন 

নিজস্ব প্রতিবেদক: কাল থেকে চালু হচ্ছে মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স...

আগস্টে সড়কে নিহত ৪৭৬

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে গত আগস্ট মাসে ৪৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনা...

পালানো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি : গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে পালানো মৃত্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা