নিজস্ব প্রতিবেদক:
দিনাজপুর: ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর হামলার মামলায় প্রধান আসামি আসাদুল ইসলামের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আসাদুল (৩৫) উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির বহিষ্কৃত সদস্য ও সাগরপুর গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে।
রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল পাঁচটায় আসাদুলকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় মামলার তদন্তকারী সংস্থা দিনাজপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শুনানি শেষে দিনাজপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান সরকারের আদালত সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমাম জাফর জানান, মামলাটির তিন আসামির অন্য দুজন রংমিস্ত্রি নবীরুল ইসলাম ও সান্টু কুমার দাসকে শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) থেকেই সাতদিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আসাদুলকেও রোববারই রিমান্ডে নেওয়া হবে।
অন্যদিকে শনিবার বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে নতুন তিনজনকে আটক করে ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন, ইউএনওর ওপর হামলার মামলার প্রধান আসামি আসাদুল ইসলামের বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম শাওন (৪০), ইউএনওর বাসভবনের মালি সুলতান কবির (৩৭) ও অন্যতম আসামি সান্টু কুমারের আত্মীয় শ্যামল কুমার (৩৩)। তাদের সঙ্গে মামলার প্রধান আসামির সম্পর্ক থাকায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইমাম জাফর জানান, শনিবার রাতে ঘোড়াঘাট থানা পুলিশের কাছে প্রধান আসামি আসাদুলকে হস্তান্তর করে র্যাব। দিবাগত রাত তিনটার দিকে তাদের কাছ থেকে আসাদুলকে বুঝে পায় ডিবি পুলিশ। তারপর তিনি শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডিবি পুলিশ তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে আসাদুলকে আদালতে হাজির করা হয়।
ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে আসাদুল ইসলামকে হাকিমপুর উপজেলার কালীগঞ্জ এলাকায় বোনের বাসা থেকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে। সেদিন রাতেও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয় আসাদুলকে।
বুধবার (০২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটায় সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা ও তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ইউএনওর মাথায় গুরুতর আঘাত এবং তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়।
পরে ইউএনও ও তার বাবাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। ওয়াহিদার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে আনা হয়। রাতে তার মাথায় অস্ত্রোপচারের পর থেকে বর্তমানে আইসিইউতে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে আছেন তিনি। তার বাবা ওমর আলী শেখ এখনো রমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় ইউএনওর ভাই শেখ ফরিদ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে ঘোড়াঘাট থানায় হত্যাচেষ্টার মামলাটি করেন।
মামলাটির তিন আসামিকেই গ্রেপ্তারের পর র্যাব বলেছে, হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল চুরি। দেখে ফেলায় তারা হামলা করেছেন।
তবে এ কথা মানতে নারাজ সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হেলালুদ্দীন আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কোনো কোনো মহল ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে বিচ্ছিন্ন ও চুরির ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার অপপ্রচার চালাচ্ছেন। অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, এটি কোনো চুরির ঘটনা নয়। কারণ, কোনো প্রকার জিনিস খোয়া যায়নি। এটি একটি পরিকল্পিত আক্রমণের ঘটনা এবং এর সঙ্গে আরও অনেক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারেন।’
সান নিউজ/ এআর