নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আবারও মামলার আবেদন করেছেন বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় পরিকল্পনাকারী ও হুকুমদাতা হিসেবে তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একমাত্র আসামি করে মামলার আবেদন করেছেন আলোচিত এই ব্যক্তি।
বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাসের আদালতে এ আবেদন করেন। আজই মামলা গ্রহণের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।
২০০৪ সালে সংঘটিত বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার ঘটনাই ইতিমধ্যে রায় হয়ে গেছে। বর্তমানে আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছে।
২০১৮ সালে দেয়া রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় আদালত।
এছাড়া রায়ে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জনসভায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনাকারী ও হুকুম দাতা এবং বাদীর দৃষ্টিতে ঘটনার প্রধান আসামি হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি হান্নানের জবানবন্দিতে থলের বিড়াল বের হয়ে এসেছে। খালেদা জিয়া পরিকল্পনা করেছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান যেভাবে আড়ালে থেকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিলেন। এরপরও তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার আসামি হননি, বেগম খালেদা জিয়াও তার স্বামীকে অনুসরণ করে আড়ালে থেকে জঙ্গিবাদী মুফতি হান্নানের দলবল দিয়ে শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের যারা জীবিত আছেন এবং দলের শীর্ষ নেতাদের খুন করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিলেন।
মামলার অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, ২০০৪ সালের ১৫ আগস্টের আগেই তারেক রহমান, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জঙ্গি সংগঠনের প্রধান মুফতি হান্নান, ডিজিএফআই পরিচালক মেজর জেনারেল রেজাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআই প্রধান ব্রিগেডিয়ার আব্দুর রহিম, পুলিশ প্রধান আশরাফুল হুদা এবং হারিছ চৌধুরী, আব্দুস সালাম পিন্টু, আলী হাসান মুজাহিদসহ প্রশাসনের প্রধান কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি গোপন বৈঠক করেন। যে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় কীভাবে ২১ আগস্টে ১৫ আগস্টের খুনের মতো শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সবাইকে হত্যা করে সফল হতে হবে। বৈঠক শেষে খালেদা জিয়া সবাইকে জানিয়েছেন, আপনারা সবাই হাওয়া ভবনে বসে তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে পরামর্শ করবেন কীভাবে এ কাজটি সফল করা যায়। বেগম খালেদা জিয়ার ধারণা ছিল, জঙ্গি সংগঠন মুফতি হান্নানের নাম দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড হলে তাকে মনে হবে একটি দুর্ঘটনা। এভাবে কাজটি করলে তিনি আড়ালে থেকে আসামি না হয়ে বাঁচতে পারবেন।
পরে হাওয়া ভবন থেকে তারেক রহমান প্রশাসনের সহযোগিতায় আনুমানিক দুই ব্যাগ গ্রেনেডসহ মুফতি হান্নানের জঙ্গি সংগঠনের ক্যাডারদের নিয়ে আওয়ামী লীগের জনসভাস্থলের বিপরীত দিকের একটি বিল্ডিংয়ে মজুত রাখে। আদেশ ছিল শেখ হাসিনার ভাষণের সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেনেড ছুঁড়ে সবাইকে শেষ করে দেওয়া হবে।
এতে আরও বলা হয়, যখন খালেদা জিয়া জানতে পারেন যে শেখ হাসিনা মারা যাননি, তখনই তিনি প্রশাসনের লোকদের নির্দেশ দেন দ্রুত আলামত নষ্ট করার জন্য। যা যা দরকার তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য, যাতে তার ওপর কোনও দোষ না পড়ে। প্রকাশ্যে মিডিয়ার সামনে তিনি বলেন, ঘটনাটি একটু দুঃখজনক, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি জজ মিয়া নাটক সৃষ্টি করে সঠিক বিচারের কবর দেন। এই সবই বেগম খালেদা জিয়ার হুকুমে সংঘটিত হয়েছে।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় এসে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিলে তখন তদন্তে তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ প্রশাসনের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আসামি করা হলেও মূল পরিকল্পনাকারী তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আসামি না করায় জনমনে একটি ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনায় দণ্ডবিধির ৩০২, ৩৪ ও ১০৯ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে।