নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা: খুলনা মহানগরীর খালিশপুরের কলেজছাত্র হাসিবুর রহমান নিয়াজ হত্যা মামলায় আসামি হাসান রাব্বিকে না পেয়ে পুলিশ তার বৃদ্ধ বাবা জুটমিলের শ্রমিক রুনু হাওলাদারকে (৬০) গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে রুনু হাওলাদারের স্ত্রী শিল্পী বেগম আরো অভিযোগ করেন, ঘটনাস্থলে ছেলে রাব্বির সঙ্গে রুনুর উপস্থিতি ও ঘটনার পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করে পুলিশ তাকে ওই মামলায় জড়িয়েছে।
শিল্পী বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী প্লাটিনাম-জুবিলী জুটমিলের একজন অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক। তার হার্টে রিং পরানো। তিনি খুবই অসুস্থ। তার মতো একজন মানুষের পক্ষে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায় কোনো ধরনের সম্পৃক্ত থাকার প্রশ্নই আসে না। হাসিব হত্যা মামলায় আমার ছেলে হাসান রাব্বিকেও আসামি করা হয়েছে। এ হত্যায় রাব্বি জড়িত কি-না, তা আমার জানা নেই। তারপরও কারও প্ররোচনায় পড়ে সে এ ঘটনায় জড়িত থাকলে আইন অনুসারে তার শাস্তি হলেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
গত ১৯ আগস্ট রাতে নগরীর খালিশপুরের লাল হাসপাতালের বিপরীতে একটি দোকানের মধ্যে দুর্বৃত্তরা হাসিব এবং তার বন্ধু জুবায়ের ও রানাকে কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসিবুর মারা যান। এ ঘটনার পরদিন ২০ আগস্ট নিহত হাসিবের বাবা মো. হাবিবুর রহমান শিকদার বাদী হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ থেকে ছয়জনের বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় মামলা করেন।
হাসিব হত্যায় রুনু হাওলাদার ছাড়াও এ পর্যন্ত এজাহারভুক্ত তিন আসামি নাজমুল শেখের ছেলে মো. সাকিব শেখ (২২), মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে মো. মুহিত মোস্তাসির ইথুন (১৮) ও গোলাম মোস্তফার ছেলে মো. তুষার (২৬) এবং সন্দেহভাজন আসামি মো. আব্দুর রহমানের ছেলে নাইমুর রহমান ফাহিমকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি সাকিব ও সন্দেহভাজন আসামি ফাহিম মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিল্পী বেগম বলেন, ‘কলেজছাত্র হাসিবুর রহমান হত্যা ঘটনার আটদিন পর ২৬ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খালিশপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নিজামসহ পুলিশ বাসায় এসে আমার ছেলেকে খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে ঘরে শোয়া আমার অসুস্থ ও বৃদ্ধ স্বামী রুনুকে দেখে তার কাছে মোবাইল ফোন ও সিমকার্ড দাবি করেন। এক পর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে তাকে খালিশপুর থানায় নিয়ে যান।’
‘আমরা যোগাযোগ করলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ছাব্বিরুল আলম ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর বলেন, তিনি তো আসামি না, জিজ্ঞাসাবাদ করতে থানায় আনা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ করেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তাকে দু’দিন থানায় বসিয়ে রেখে গত ২৮ আগস্ট হাসিবুর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে রুনুর স্ত্রী হাসিব হত্যার সঠিক বিচার দাবি করে অবিলম্বে তার স্বামী রুনু হাওলাদারকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি এবং দ্রুত মুক্তির দাবি জানান। বলেন, ‘কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই বাসায় শুয়ে থাকা একজন অসুস্থ মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে ডেকে নিয়ে হত্যাকাণ্ডের মতো মামলায় জড়িয়ে দেওয়া কতোটা অমানবিক।’
খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার ও সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আপনারা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দেখুন, কেন ও কার স্বার্থে আমার নির্দোষ স্বামীকে কলেজছাত্র হাসিবুর হত্যা মামলায় জড়ানো হলো? হাসিবুর ও তার দুই বন্ধুকে কোপানোর দৃশ্য সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজে রয়েছে। পুলিশ সেই ফুটেজ দেখেই হত্যাকারীদের শনাক্ত করবে বলে পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুরে সঙ্গে নিহত হাসিবুরের পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় তিনি ওই পরিবারকে খুশি করতেই আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে মামলায় জড়িয়েছেন। এছাড়াও তিনি অন্য আসামিদের মা-বাবাদেরও থানায় নিয়ে হয়রানি করছেন বলে শুনেছি।’
এ বিষয়ে কেএমপি কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন শিল্পী।
কলেজছাত্র হাসিব হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার না হওয়া আসামিরা হলেন, খালিশপুর তৈয়্যবা কলোনির কবির মুক্তিযোদ্ধার ছেলে সৈকত (৩২), তৈয়্যবা কলোনির লাভ রোডের কুদ্দুস মোল্লার ছেলে আরাফাত (৩৫), মেগার মোড়ের বাবুর ছেলে অন্তু (৩২), তৈয়্যবা কলোনির রুনু হাওলাদারের ছেলে হাসান রাব্বি (২৬), পাওয়ার হাউজ গেট এলাকার কানা নুরুর ছেলে সাজ্জাত (২০) ও সেন্টুর ছেলে হৃদয় (২০), টিঅ্যান্ডটি এলাকার স্বামীহারা রোডের নান্নুর ছেলে তুষার (২২), তৈয়্যবা কলোনির আকরামের বাড়ির ভাড়াটিয়া রাব্বি ওরফে নাটা রাব্বি (২৫) ও রুবেল (২৪), তৈয়্যবা কলোনির রাকিবের বাড়ির ভাড়াটিয়া ফকরুলের ছেলে সাইফুল (২৫), বঙ্গবাসি এলাকার মান্নানের ছেলে পয়েন্ট বাবু (২৫) ও কালামের ছেলে সালমান (১৯), তৈয়্যবা কলোনির জব্বারের ছেলে রায়হান (২২), মনির হাজি মসজিদের পাশে এনই-৯ এর বাসিন্দা আমীর খানের দুই ছেলে আরিফ (২৮) ও মুন্না (২২), তৈয়্যবা কলোনির নাটা জুয়েল (২৫) ও ভাসানি স্কুলের সামনে এন এ/২৩ এর আমিন উদ্দিনের ছেলে আতাং বাবু (২৮)।