সোয়া লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধার ঘাড়ে
অপরাধ

সোয়া লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল, অথচ সংযোগই নেই!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

টাঙ্গাইল: বসানো হয়নি কোনো বৈদ্যুতিক খুঁটি। তারও টানানো হয়নি আবেদনকারী গ্রাহকের সেচ প্রকল্প পর্যন্ত। দেওয়া হয়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। অথচ বিল এসেছে প্রায় সোয়া লাখ টাকা। সেই ভুতুড়ে বিল কখনও পাঠানো হয়নি গ্রাহকের কাছে। কিন্তু বিল খেলাপির দায়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অধীনে টাঙ্গাইলের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ কর্তৃপক্ষ বৃদ্ধা গ্রাহক শ্যামলা বেগমের মামলাও দিয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার কাশিল ইউনিয়নের দাপনাজোর হাকিমপুর গ্রামের মৃত আবদুর সবুর মিয়ার স্ত্রী শ্যামলা বেগম সেচ মেশিনে বিদ্যুৎ লাইন নেওয়ার জন্য ২০১৪ সালের শেষের দিকে বাসাইল পৌর এলাকার মশিউর রহমান নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ লাইনের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) টাঙ্গাইলের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর অধীনে আবেদন করেন। ওই সময় দাপনাজোর হাকিমপুর, দেউলী ও মুড়াকৈ এলাকার ১২ জনের কাছ থেকে সেচ মেশিনে বিদ্যুতের লাইন পাইয়ে দিতে মশিউর রহমান ১১ লাখ টাকা নেন। ২০১৫ সালের প্রথম দিকে তিনি ৯ জনের সেচ মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেন। এছাড়া নিজ দায়িত্বে বাঁশ, সিমেন্টের খুঁটি ও তার কিনে আরও দুইজন তাদের সেচ মেশিনে সংযোগ নেয়। ওই সময় রহস্যজনক কারণে শ্যামলা বেগমের লাইন না দিয়ে সংশ্লিষ্টরা তার লাইন বাতিলের কথা বলে কাজ শেষ করে চলে যায়।

আবেদনের প্রায় পাঁচ বছর পর সম্প্রতি শ্যামলা বেগমের নামে এক লাখ ১৪ হাজার ৬২৭ টাকা বিদ্যুৎ বিল দেখিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী দফতরের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ (বিউবো) এর সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইমুম শিবলী বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) বিদ্যুৎ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। ফলে নিরীহ শ্যামলা বেগম চরমভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ মামলায় আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর বিবাদী বৃদ্ধা শ্যামলা বেগমকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের এমন কার্যক্রমে এলাকায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভুক্তভোগী বৃদ্ধা শ্যামলা বেগম বলেন, ‘আমরা ১২ জন সেচ মেশিনে বিদ্যুতের লাইনের জন্য আবেদন করলে লাইন পাইয়ে দিতে স্থানীয় শফিকুলের মাধ্যমে বাসাইলের মশিউর রহমান সেচপ্রতি ৮০ হাজার করে টাকা নেন। ওই সময় ১১ জন বিদ্যুৎ লাইন পেলেও আমাকে লাইন দেওয়া হয়নি। খুঁটি বসানো হয়নি, টানানো হয়নিও তারও। আমার ৮০ হাজার টাকাও ফেরত দেয়নি। উল্টো আমার নামে এক লাখ ১৪ হাজার ৬২৭ টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে। এছাড়া আমার নামে তারা মামলাও করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ অফিসের এমন মিথ্যা মামলায় এই বৃদ্ধা বয়সে আমাকে আদালতে দাঁড়াতে হবে। এমনকি বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও বিল খেলাপির অপবাদে জেলেও যেতে হতে পারে। এ ব্যাপারে আমি কী করবো বুঝতে পারছি না। এখন খুবই চিন্তায় আছি।’

শ্যামলা বেগমের ছেলে সুরুজ্জামান বলেন, ‘২০১৪ সালে আমরা একটি সেচ মেশিন করার পরিকল্পনা করে বিদ্যুৎ লাইন আনার জন্য আবেদন করি। তখন নানা অজুহাতে আমাদের লাইনটি বাতিল হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা চলে যায়। প্রায় পাঁচ বছর পর আমার মায়ের নামে হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভাগের মামলার নোটিশ আসে। তারা মামলার কপির সঙ্গে বিদ্যুৎ বিল পাঠিয়ে দেন। অথচ সেচ মেশিন বা বিদ্যুৎ লাইনের কোনও অস্তিত্বই নাই।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মহসিনুজ্জামান বলেন, ‘বিদ্যুৎ লাইনের জন্য শ্যামলা বেগম আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ খুঁটি স্থাপন বা কোনও তারও টানায়নি, সংযোগও দেয়নি। তারপরও শ্যামলা বেগমের নামে বিদ্যুৎ বিল খেলাপি মামলা হয়েছে। এই মামলা থেকে বৃদ্ধা শ্যামলা বেগমকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

বিদ্যুৎ লাইন পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে টাকা লেনদেনকারী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৪ সালের শেষের দিকে আমার নিজের একটিসহ ১২টি সেচ মেশিনে বিদ্যুৎ লাইনের জন্য আবেদন করে ইস্টিমেট করি। তখন আমার হাত দিয়েই ১২টি সেচের জন্য বাসাইলের মশিউর রহমানকে ১১ লাখ টাকা দেই। সেই সময় ১১টি সেচে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু শ্যামলা বেগমের সেচ পয়েন্ট পর্যন্ত কোনও প্রকার খুঁটি স্থাপন বা তার টানানোই হয়নি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও কোনও সুরাহা হয়নি। তারা বলে এ লাইন বাতিল হয়ে গেছে। শ্যামলা বেগমের লাইন আর হবে না। এ পাঁচ বছর শ্যামলা বেগমের নামে কোনও বিদ্যুৎ বিলও আসেনি। হঠাৎ করেই শ্যামলা বেগমের নামে বিল বকেয়া সংক্রান্ত বিদ্যুৎ বিভাগের মামলার সমন এসেছে। এতে এলাকায় সাধারণ মানুষের মনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ লাইন পাইয়ে দিতে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা গ্রহণকারী মশিউর রহমান বলেন, ‘ওই এলাকায় ৯টি সেচে বিদ্যুৎ লাইন দেওয়া হয়েছে। বাকি ৩টির বিষয়ে আমার জানা নেই। পরে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বাকি ৩টির ব্যাপারে অফিসকে অবহিত করা হয়। এরমধ্যে দুটিতে নিজ দায়িত্বে খুঁটি এবং তার কিনে সংযোগ নেন। কিন্তু শ্যামলা বেগমের লাইনটি বাতিল হলে অফিসকে অবহিত করা হয়েছিল। যেখানে অফিসকে অবহিত করা হয়েছে সেখানে শ্যামলা বেগমের নামে বিদ্যুৎ বিল আসার কথা না। তার নামে কেন বিদ্যুৎ বিল আসলো এটা বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারাই ভালো জানেন।’

মামলার বাদী টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী দফতরের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ (বিউবো) এর সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইমুম শিবলীর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

টাঙ্গাইলের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ (বিউবো)-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদত আলীর সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি রেগে গিয়ে ফোন কেটে দেন।

সান নিউজ/ বিএম/ এআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

গাজীপুরে কাব স্কাউট ইউনিট লিডার বেসিক কোর্স শুরু

জেলা প্রতিনিধি : গাজীপুরে বাংলাদেশ স্কাউটসের অর্থায়নে এবং বা...

বোয়ালমারীতে পলাতক ফাঁসির আসামি গ্রেপ্তার

কামরুল শিকদার বোয়ালমারী ( ফরিদপুর) প্রতিনিধি : ফরিদপুরে গৃহব...

আইনজীবীকে হত্যার ঘটনায় মুন্সীগঞ্জে বিক্ষোভ

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : চট্টগ্রামে ইসকন সমর্থকদের হামল...

নতুন বাংলাদেশে কেমন সংবিধান চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভা 

ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ‘নতুন বাংলাদেশে কেমন সংবিধান চাই&r...

মাটিরাঙ্গায় যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গ...

কৃষি খাতকে দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে ধ্বংস 

জেলা প্রতিনিধি: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কেন্দ্রীয় প্যাকেজিং...

আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া, আটক ৩

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কে...

নতুন বাংলাদেশে কেমন সংবিধান চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভা 

ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ‘নতুন বাংলাদেশে কেমন সংবিধান চাই&r...

মুন্সীগঞ্জে শহীদ ও আহত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা

মো. নাজির হোসেন (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবি...

আমাকে রংপুরের সন্তান মনে করেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরক...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা