নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফরিদপুর: মাছ ধরা নিয়ে তুচ্ছ বিরোধের জেরে ভাঙ্গা উপজেলার নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের হাবেলি গঙ্গাধরদী গ্রামে (পশ্চিমপাড়া) দুই ভাই শামিম মাতুব্বর (২২) ও রাকিব মাতুব্বরকে (১৫) নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। হামলা-সংঘর্ষে গুরুতর আহত নিহতদের ভাগ্নে ইমন মাতুব্বরসহ আরো সাতজন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ (ফমেক) ও ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নিহতরা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন মাতুব্বরের দুই ছেলে। শামিম ঢাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। ছোট ভাই রাকিব স্থানীয় গঙ্গাধরদী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র।
প্রতিবেশী সাত্তার মাতুব্বর ছদ্দাক (৭০) ও তার চার ছেলেসহ অন্যরা কুপিয়ে তাদের হত্যা করেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে হামলাকারী সাত্তার (৭০) ও তার এক ছেলে সালাম মাতুব্বরকে (২৫) । অন্যরা পলাতক। পুলিশ ঘাতকদের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ঢাল, সরকি, টেটা ও রামদা জব্দ করে। দুই সহোদর হত্যার ঘটনায় ভাঙ্গা থানায় মামলা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) গাজি রবিউল ইসলাম, ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুর রহমান। পুলিশ সুপারে ঘাতকদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের আশ্বাস দেন।
স্থানীয়রা জানান, রোববার (২৩ আগস্ট) বিকালে গ্রামের বিলে মাছ ধরতে জাল পেতে বাড়িতে চলে আসেন শামিম ও রাকিব। কিছুক্ষণ পরে তাদের প্রতিবেশী ছদ্দাক মাতুব্বরের চার ছেলে জামাল, আফজাল, কালাম ও ছালামও গিয়ে তাদের জালের ওপরে নিজেদের জাল পাতেন। সন্ধ্যায় রাকিব গিয়ে সেটি দেখে জামালদের জাল উঠিয়ে গুছিয়ে ডাঙ্গায় রেখে দেয়। এ নিয়ে জামাল মাতুব্বরসহ তার ভাইয়েরা রাকিবের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করেন এবং মারধরের হুমকি দেন। এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি ও ধাক্কাধাক্কিও হয়।
এর জেরে সোমবার (২৪ আগস্ট) ভোরে প্রতিবেশী জামাল মাতুব্বররা চার ভাই মিলে নিহতদের বাড়ির সামনের রাস্তায় এসে গালিগালাজ করতে থাকেন। এ সময় শামিম ও রাকিব এগিয়ে গেলে ছদ্দাক মাতুব্বরের পরিবারের সবাই মিলে তাদেরকে এলোপাতাড়ি কাতরা ও রামদা দিয়ে নৃশংসভাবে কোপাতে থাকেন। এতে শামিম ঘটনাস্থলেই মারা যান। ঠেকাতে এসে বাধা সংঘর্ষে গিয়াস মাতুব্বরের পরিবারের আরো সাতজন আহত হন। পরে পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা শামিমের মরদেহ ও রাকিবকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ (ফমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ফমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, নিহতদের মাথায় একাধিক কোপের চিহ্ন রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হাসপাতালে আনার আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) গাজী রবিউল ইসলাম ও ভাঙ্গা থানার ওসি শফিকুর রহমান বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। মাছধরাকে কেন্দ্র করে সহোদর দুই ভাইকে সাত্তার মাতুব্বর গংরা কুপিয়ে হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার ও তাদের বাড়ি থেকে দেশি অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।
তারা জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিবেশ শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে যাবতীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম তারেকও জানান, মাছধরা নিয়ে আগের দিন দুই পরিবারের মাঝে ঝগড়া হয়। সোমবার সকালে শামিম ও রাকিব গালাগালি শুনতে পেয়ে বাড়ির রাস্তায় প্রতিপক্ষের দিকে এগিয়ে গেলে সাত্তার মাতুব্বরের ছেলেরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাদের হত্যা করেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, নিহত শামিম ও রাকিবরা চার ভাই। বড় ভাই শাহীন মাতুব্বর মালয়েশিয়া থাকেন। দ্বিতীয় ভাই আলিনুর ও নিহত শামিম ঢাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। অভাবের সংসার বাবা গিয়াস মাতুব্বর কৃষিকাজ করে সংসার চালান। করোনাকালে বাড়িতে এসে ছোট ভাই রাকিবের সঙ্গে নৃশঙস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন শামিম।
সান নিউজ/ এআর