নিজস্ব প্রতিবেদক:
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ জেল থেকে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু বিষয়ক দুইটি বইয়ের গ্রন্থস্বত্ব ও মেধাস্বত্ব চুরির মাধ্যমে ২০ কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টার ঘটনার তদন্ত করছে সরকার। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। সূত্র জানায়, বিষয়টি পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত চেক ছাড়বে না প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।
অন্যদিকে মেধাস্বত্ব দাবি করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সম্পাদক অমিতাভ দেউরী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কারা অধিদফতরের বই সম্পর্কে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা জানান, ‘এ বিষয়ে বিস্তারিত আমার জানা নেই। আমি দেখিওনি। তবে মন্ত্রণালয় (স্বরাষ্ট্র) থেকে আমার কাছ থেকে একটি কাগজ চেয়েছিল। আমি মন্ত্রণালয়কে কাগজ পাঠিয়েছি।’
সাংবাদিক অমিতাভ দেউরী বলেন, ‘মন্ত্রণালয় বা অধিদফতর কিংবা এর সঙ্গে যারা জড়িত তারা কেউ আমাকে জানায়নি। আমি হঠাৎ করে জানতে পারলাম, আমার নাম মেধাস্বত্ব যেভাবে সংরক্ষিত ছিল তা আর নেই। সাম্প্রতিক যে প্রকাশনা সেখানে আমার সে অধিকার নেই। আমি আমার অধিকার ফিরে পেতে চাই। তার জন্য আমি যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। দুই মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন বলেও জানান সম্পাদক অমিতাভ দেউরী।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ জেল থেকে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু বিষয়ক দুইটি বইয়ের মেধাস্বত্ব ও গ্রন্থস্বত্ব চুরির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, ১৭ কোটি ৫৭ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রকাশনা সংস্থা জার্নি মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড। এছাড়া স্বাধীকা পাবলিশার্সের নামের একটি প্রকাশনা হাতিয়ে নিচ্ছে আরও ৩ কোটি ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯০০ টাকা। মুজিববর্ষে দেশের ৬৫ হাজার ৭০০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু বুক কর্নারের’ জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের বই কেনা প্রকল্পে এই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ মতে, প্রকল্পের মোট ২৮ কোটি ৭৮ লাখ ১২ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে ২০ কোটি ৭০ লাখ ৮৬ হাজার ৪০০ টাকাই পাচ্ছেন দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে এক ব্যক্তি। নাজমুল হোসেন নামে এই ব্যক্তি যমুনা টেলিভিশনে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বই নিয়ে মন্ত্রণালয়ের এক পয়সার ইনভল্ভমেন্ট নেই। শুধু ছাপার অনুমোদন দিয়েছি। তারা নিজস্ব অর্থায়নে বই করেছে। আমাদের নাম ব্যবহার করবে সে জন্য আমাদের রয়্যালিটি দেবে যখন তারা বিক্রি করবে। আমরা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলাম একা পারিনি, তাই প্রাইভেট পার্টি বই প্রকাশ করেছে।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের বই নাজমুল ছেপেছেন কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বইটিতে প্রধানমন্ত্রীর লেখা, ইতিহাস বিভাগের একজন শিক্ষকের লেখা এবং আমার একটি লেখা রয়েছে বইটিতে। বইটিতে তিনটি মাত্র আর্টিকেল রয়েছে।’
অথচ এই বইটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের গত ২৭ জুনের প্রজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে—বইটির সম্পাদকের নাম অমিতাভ দেউরী অবিকৃত থাকলেও বদলে গেছে প্রকাশকের নাম। প্রজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে প্রকাশক জার্নি মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড। যদিও প্রথম সংস্করণে আছে বইটির প্রকাশক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আর বইগুলো কেনার প্রাথমিক তালিকায় বইটির প্রকাশক মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।
দ্বিতীয় সংস্করণে দেখা গেছে ক্রেডিট লাইনের সবার নিচে থেকে একেবারে সম্পাদকের নামের ওপরে উঠে এসেছেন নাজমুল হোসেন। তার পরিচয় দেখানো হয়েছে প্রধান গবেষক ও প্রধান নির্বাহী, জার্নি।
তৃতীয় সংস্করণে আমূল পরিবর্তন দেখা গেছে। প্রকাশকেরই নাম বদলে গেছে। প্রকাশক মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের জায়গায় ‘সমন্বয়ক ও প্রকাশক’ হিসেবে ছাপা হয়েছে নাজমুল হোসেনের স্ত্রী শারমীন সুলতানার নাম। সব সংস্করণেই উপদেষ্টা কিংবা প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নাম রয়েছে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নাজমুল হোসেন বলেন, ‘জার্নি মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড একটি গবেষণাধর্মী ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে “বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা” এবং জেলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সমগ্র কারাজীবন নিয়ে ‘৩০৫৩ দিন’ বই দুটির স্বত্ব জার্নি মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের নামে। কপিরাইট সংক্রান্ত কাগজপত্র রয়েছে। সমস্ত নিয়ম মেনেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু বুক কর্নারের জন্য বই সরবরাহ করা হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।’