নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রীকে অপহরণ করে বিয়ে করার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন।
আইনজীবী মো. সোহরাব হোসেন পলাশ ও জাহিদুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহিন আহমেদ খান আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন।
সোহরাব হোসেন পলাশ বলেন, আইডিয়ালের শিক্ষার্থী সিনথিয়া ইসলামকে গত মার্চ মাসে খন্দকার মুশতাক বিয়ে করেছেন। সিনথিয়ার বয়স এখন ১৮ বছর ৪ মাস। গত ২২ জুন সিনথিয়ার বাবা ঠাকুরগাঁওয়ে মুশতাকের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করে।
আরও পড়ুন: রামগড়ে বিদেশী মদ-অবৈধ ফার্নিচার জব্দ
প্রসঙ্গত, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ গভর্নিং বডির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ কলেজ ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করেছেন- এই অভিযোগের তদন্ত করতে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা ও আইসিটি) প্রধান করে এক সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন সাইটে তাদের ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়ে।
গত ৭ জুন মুশতাকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে নিউজ প্রকাশিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে একাধিক ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে কথোপকথন শোনা যায়, প্রাইভেট গাড়িতে বসে অঝরে কাঁদছেন এক নারী।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
তাকে নামিয়ে দেওয়ার আকুতি জানিয়ে বারবার বলছেন ‘আমার ক্লাস আছে একটু পর, প্লিজ যেতে দেন। আমাকে নামিয়ে দিন এখানে। প্লিজ আমি ক্লাসটা মিস দিতে পারব না। প্লিজ।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবে আর্তনাদ আর আকুতি জানালেও মন গলেনি ওই ব্যক্তির (একজন পুরুষ)। উত্তরে তিনি (পুরুষ) ওই শিক্ষার্থীকে শাসাতে থাকেন।
এ সময় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার সঙ্গে ঠিক মতো কথা বলতে হবে। ঠিকমতো পড়ালেখা করো; লাইফ নষ্ট করতেছো।’ভিডিওতে পুরুষ কণ্ঠ শোনা গেলেও তাকে দেখা যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওর ওই নারী রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
আর পুরুষ কণ্ঠের ওই ব্যক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ছাত্রীর সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্যের এমন আচরণের বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় ফুঁসে ওঠেন অভিভাবকরা। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
আরও পড়ুন: যশোরের ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড
এদিকে ছাত্রীর সঙ্গে এমন ঘটনার জেরে গত ৩১ মে পরিচালনা পর্ষদের সভায় ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মমতাজ বেগমকে দিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
গভর্নিং বডির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, খন্দকার মুশতাক আহমেদের বাসায় ‘পিকনিকের’ আয়োজন করেন অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী। সেখানে কয়েকজন ছাত্রীকে খন্দকার মুশতাককে পরিচয় করিয়ে দেন। এই পরিচয়ের সূত্র ধরে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে ওই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ভাগ্নীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ!
বিষয়টি শিক্ষক ও অন্য ছাত্রীদের নজরে আসে। এরপর ভিডিও ভাইরাল হয়। অভিযুক্ত সদস্যকে দুইমাসের জন্য ‘নিষিদ্ধ’ করেছে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি।
এদিকে ১ জুন অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রোস্তম আলী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের দাতা সদস্য ষাটোর্ধ্ব খন্দকার মুশতাক আহমেদ প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখার ১৭ বছর বয়সী ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক রেখেছেন।
একপর্যায়ে অভিভাবকদের চাপে সম্প্রতি মেয়েটিকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছেন মুশতাক। এটি তার তৃতীয় বিয়ে।
সান নিউজ/এইচএন