নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা: খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী থানার ইস্টার্নগেট মশিয়ালী এলাকার ট্রিপল মার্ডার মামলার মূল আসামি জাকারিয়া ও তার ভাই মিল্টনকে ৩৫ দিনেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেপ্তার হননি আরো ১১ জন। এ মামলার এজাহারভুক্ত ২২ আসামির মধ্যে মূল হোতা তিন সহোদরের একজন জাফরিনসহ এ পর্যন্ত মাত্র নয়জন গ্রেপ্তার হওয়ায় জনমনে নানা সন্দেহ-আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত মূল আসামি জাকারিয়া-মিল্টনকে গ্রেপ্তার এবং ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে মশিয়ালী এলাকাবাসীর দেওয়া এক সপ্তাহের আল্টিমেটামও শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট)। গত ১৩ আগস্ট দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও এলাকায় মানববন্ধনে এক সপ্তাহের মধ্যে জাকারিয়া-মিল্টনদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা। ট্রিপল মার্ডারের পর থেকেই এলাকাবাসী আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন করে আসছেন।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) এজাহারভুক্ত আসামি মো. জুয়েল শেখ (৪০) ও তার ভাই মো. মুরাদ শেখকে (৩২) গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক মো. এনামুল হক। খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালত শুনানি শেষে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আসামিরা মশিয়ালী এলাকার মো. মোকছেদ শেখের ছেলে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, ট্রিপল মার্ডার মামলার এজাহারভুক্ত ২২ জন আসামির মধ্যে এ পর্যন্ত নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন, মশিয়ালী গ্রামের মৃত হাসান আলী শেখের ছেলে মো. জাফরীন শেখ (৩২), মো. মোকছেদ শেখের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর শেখ (৩৫) ও মো. আলমগীর শেখ (৩৮), মো. কুরবান শেখের ছেলে মো. আরমান শেখ (২০), মৃত আক্তার আকুঞ্জির ছেলে মো. রহিম আকুঞ্জি (২২), মো. ফারুকের ছেলে মো. রবিন (২০), মো. বাবুল শেখের ছেলে মো. মিঠু শেখ (৩৩) ও সর্বশেষ মো. মোকছেদ শেখের ছেলে মো. জুয়েল শেখ (৪০) ও তার ভাই মো. মুরাদ শেখ (৩২)।
তাদের মধ্যে জাফরীন শেখ, আরমান শেখ ও আলমগীর শেখ আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃত নয়জনকেই রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই রাতে মো. জাকারিয়া শেখ মশিয়ালী সিঅ্যান্ডবি’র ঘরের একটি কক্ষে তিন রাউন্ড বন্দুকের গুলি ও দুই রাউন্ড পিস্তলের গুলি নিজে রেখে ট্রিপল মার্ডার মামলার বাদীর চাচাতো ভাই মুজিবর শেখকে পুলিশে ধরিয়ে দেন। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাদীসহ পাড়ার আরো কিছু লোক মুজিবরকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার কারণ জানতে তিন সহোদর শেখ জাকারিয়া, মিল্টন ও জাফরিনের বাড়ির সামনে যান। এ সময় তাদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডার একপর্যায়ে মিল্টন শেখ গুলি করলে নজরুল শেখ মারা যান। জাফরীন শেখ গুলি করলে গোলাম রসুল নিহত হন। শেখ জাকারিয়ার গুলিতে জখম হন বাদীর ছেলে সাইফুল ইসলাম। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তাদের অন্য সহযোগীদের গুলিবর্ষণে বাদীসহ অন্যরা পালিয়ে যান। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন আফসার উদ্দিন, তার ছেলে রবি, শামীম, খলিল, রানা ও সুজন শেখসহ আরও অনেকে। অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী গণপিটুনি দিয়ে জাকারিয়া বাহিনীর সদস্য জিহাদ শেখকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় মোট মৃত্যু হয় চারজনের।
নিহত তিনজনের একজন সাইফুলের বাবা মো. শাহিদুল শেখ মশিয়ালী এলাকার মৃত হাসান আলী শেখের চার ছেলেসহ ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫/১৬ জনকে আসামি করে খানজাহান আলী থানায় হত্যা মামলাটি করেন।
সান নিউজ/ এআর