নিজস্ব প্রতিবেদক:
বরিশাল: উজিরপুর উপজেলায় রোগীর বোনকে উত্ত্যক্ত ও জিম্মি করার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ক্লিনিক মালিক রেজাউল করিম সর্ম্পকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছে প্রশাসন।
উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃত রেজাউলের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। সবগুলো অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে আগেও থানায় মামলা ছিল। বুধবার (১৯ আগস্ট) রাতে হওয়া সর্বশেষ মামলায় গ্রেপ্তার করে সোপর্দ করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন বলেও জানান ওসি।
প্রশাসন ও পুলিশ সূত্র জানায়, উজিরপুরের মায়ের দোয়া ক্লিনিকের মালিক রেজাউল করিম নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিলেও তিনি মূলত একজন সবজি বিক্রেতা ছিলেন। উপজেলার পশ্চিম সাতলা গ্রামের দিনমজুর মৃত আদম আলী সরদারের ছোট ছেলে রেজাউল ২০০৩ সালে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন। সংসারের অভাবে তিনি বিলের শাপলা তুলে এলাকায় ফেরি করে বিক্রি করতেন।
তবে রেজাউল দাবি করেছেন, ২০০৭ সালে (স্টুডেন্ট আইডি ০৪-০-১১-১৬৫-০২৩) উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাস করেন। তবে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে স্টুডেন্ট আইডির ওই সিরিয়ালে মানিকগঞ্জের মোতিলাল ডিগ্রি কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইনের নামে পাওয়া যায়। এমনকি প্রতারক রেজাউল করিম নিজেকে এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। তিনি পিস বেন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন বলে দাবি করতেন।
তবে গ্রেপ্তারের পর এসব সনদ তার নিজের তৈরি বলে স্বীকার করেছেন বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
গত ১১ আগস্ট (বুধবার) দুপুরে মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার সুতারকান্দি গ্রামের রহিম বেপারীর স্ত্রী মায়া বেগম মুখে ও গলায় ইনফেকশন নিয়ে মায়ের দোয়া ক্লিনিকে ভর্তি হন। ১৩ আগস্ট (শুক্রবার) অসুস্থ মায়াকে সেবা করতে তার ছোট বোন ওই ক্লিনিকে আসেন। ক্লিনিক মালিক ও ভুয়া ডাক্তার রেজাউল রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোবাইলে মায়া বেগমের বোনকে ক্লিনিকের ছাদে দেখা করতে ডাকেন। কিন্তু রোগীর বোন রেজাউলের ডাকে সাড়া দেননি। পরদিনও একইভাবে গভীর রাতে রেজাউল তাকে ফোন করে ক্লিনিকের দোতলার একটি রুমে ডাকেন। তাতেও সাড়া দেন না ওই তরুণী।
পরদিন ১৫ আগস্ট (রোববার) দিনে মেয়েটিকে ভয়-ভীতি দেখান রেজাউল। ওইদিন রাত দেড়টায় রোগীরা ঘুমালে ওয়ার্ডে ঢুকে মায়া বেগমের ঘুমন্ত বোনের স্পর্শকাতর স্থানে হাত বুলান। টের পেয়ে ওই তরুণী চিৎকার দিলে পালিয়ে যান রেজাউল। বিষয়টি জানাজানি হলে কাউকে না বলতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে রেজাউল। শেষে অবস্থা বেগতিক দেখে রোগী ও তার বোনকে ওয়ার্ডে আটকে রাখেন।
এসব ঘটনা মোবাইলে মায়া তার ভাইকে জানালে তিনি উজিরপুর থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় রেজাউলের ক্লিনিক থেকে রোগী ও তার বোনকে উদ্ধার করে পুলিশ। পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হয় ক্লিনিক মালিক রেজাউলকে।
এর আগে ছয় বছরের ছেলে হাসানের পায়ুপথে ঘা দেখা দিলে ছেলেকে নিয়ে রেজাউলের কাছে যান বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার গ্রামের দিনমজুর ফোরকান মিয়া। রেজাউল শিশু হাসানের পায়ুপথে অপারেশন চালালে সেখানে পচন ধরে। বর্তমানে হাসান মৃত্যুপথযাত্রী।
ওই সময় অপচিকিৎসার প্রতিবাদ করলে হাসানের পরিবারকে ক্লিনিক থেকে তাড়িয়ে দেন রেজাউল। অপচিকিৎসা ও হয়রানির ঘটনায় গত বছরের ২৪ জুলাই ফোরকান মিয়া ভুয়া ডাক্তার রেজাউলের বিরুদ্ধে বরিশাল চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।
সান নিউজ/ এআর