নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতি করার অভিযোগে জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুল হক চৌধুরী ও চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরীসহ আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে তাদের বিচার শুরু হলো। বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরাফুজ্জামান আনছারীর আদালত এ অভিযোগ গঠন করেন।
অপর আসামিরা হলেণ—আবু সাঈদ চৌধুরী, হিমু, তানজিলা, বিপুল, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা।
ডা. সাবরিনার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২৭ আগস্ট দিন ধার্য করেন আদালত। ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন আট আসামি পক্ষে তাদের আইনজীবীরা অভিযোগ গঠন শুনানিতে আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদনের ওপর শুনানি করেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু অব্যাহতির বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক অব্যাহতির আবেদন নামুঞ্জর করে অভিযোগ গঠন করেন।
বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) সকালে জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুল হক চৌধুরী ও চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরীসহ আট জনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাদের আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর ১১ টা ৫০ মিনিটে আদালতের এজলাসে হাজির করা হয়। এর কিছু অংশ শুনানির পর আদালত দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে ফের শুনানি জন্য সময় নির্ধারণ করেন।এরপর নির্ধারিত সময় শুনানি শুরু করে শেষ হয় ৪ টায়।
এর আগে গত ৬ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুলফিকার হায়াত মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) গ্রহণ করেন। এরপর তিনি মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরাফুজ্জামান আনছারীর আদালতে বদলির আদেশ দেন। একইসঙ্গে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ১৩ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে দুপুরের সাবরিনা ও আরিফসহ আট জনের বিরুদ্ধে চার্জশিটটি দাখিল করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী। চার্জশিটে সাবরিনা ও আরিফকে মূল হোতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাকিরা প্রতারণা ও জালিয়াতি করতে তাদের সহযোগিতা করেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে হিমু, তানজিলা ও রোমিও দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, এ মামলায় গত ২২ জুন জেকেজির সাবেক গ্রাফিক ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে আটক করে পুলিশ। হিরু স্বীকারোক্তি দিয়ে জানান, তিনি ভুয়া করোনা সার্টিফিকেটের ডিজাইন তৈরি করতেন, যার সঙ্গে জেকেজি গ্রুপের লোকজন জড়িত। ওই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জেকেজির সিইও আরিফুলসহ চার জনকে আটক করে। সিইও জানায়, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর জ্ঞাতসারেই সবকিছু হয়েছে।
এরপর গত ১২ জুলাই ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। ১৩ জুলাই তার তিন দিনের রিমান্ড হয়। ওই রিমান্ডের পর ১৭ জুলাই তার ফের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আর মামলায় গত ২৩ জুন আরিফ চৌধুরী গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডে যায়। পরবর্তীতে গত ১৫ জুলাই তাকে ফের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। রিমান্ড শেষে সব আসামিই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ছিলেন। সাবরিনার কারণেই করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজ পায় জেকেজি হেলথকেয়ার। প্রথমে তিতুমীর কলেজ মাঠে স্যাম্পল কালেকশন বুথ স্থাপনের অনুমতি মিললেও প্রভাব খাটিয়ে ঢাকা, নায়ায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করেছিল। নমুনা সংগ্রহের জন্য মাঠকর্মী নিয়োগ দেয় তারা। তাদের হটলাইন নম্বরে রোগীরা ফোন দিলে মাঠকর্মীরা বাড়ি গিয়ে এবং বুথ থেকেও নমুনা সংগ্রহ করতেন। এভাবে নমুনা সংগ্রহ করে তারা ২৭ হাজার রোগীকে করোনার টেস্টের রিপোর্ট দেয়। যার মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনা আইইডিসিআরের মাধ্যমে সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০ জনের রিপোর্ট প্রতিষ্ঠানটি জালিয়াতির মধ্যেমে তৈরি করে। প্রত্যেক সার্টিফিকেট প্রদানের বিনিময়ে তারা ৫ হাজার টাকা করে নিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় সাবরিনাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সান নিউজ/ বিএম.