নিজস্ব প্রতিবেদক:
একজন মৎস্যজীবীকে হত্যা ও সন্ত্রাসী বাহিনী লালন করার অভিযোগে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার মশিয়ার রহমানকে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে তাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কারও করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাকে কেন স্থায়ীভাবে দল ধেকে বহিষ্কার করা হবে না ২১ দিনের মধ্যে তার সন্তোষজনক জবাব দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন দলের জেলা কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক।
বুধবার রাতে সাতক্ষীরার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে একথা বলা হয়েছে।
মশিয়ার রহমানকে পাঠানো দলীয় চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বিগত ৮ ডিসেম্বর ২০১৯, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি গঠিত হয়। ঘোষিত কমিটিতে আপনাকে (সরদার মশিয়ার রহমান) সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করা হয়।
আপনার বিরুদ্ধে এই মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে যে আপনি সংগঠনের পদ-পদবি ব্যবহার করে সমগ্র উপজেলাব্যাপী নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গঠনসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত হয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি তালা উপজেলার জেয়ালা নলতা নামক গ্রামের নলবুনিয়া মৎস্য ঘেরে একজন কৃষি শ্রমিক হত্যায় আপনি জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়।
আপনার এহেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সংগঠনের ভাবমূর্তি প্রচণ্ডভাবে ক্ষুন্ণ হওয়ায় সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ (ক) ধারাসহ বিভিন্ন উপধারায় বর্ণিত মোতাবেক আপনাকে সংগঠনের তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।
যেহেতু আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগসমূহ গুরুতর বিধায় চূড়ান্তভাবে আপনাকে কেন সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না তা অত্র পত্র প্রাপ্তির ২১ দিনের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারী বরাবর লিখিত জবাব দাখিল করার জন্য বলা হলো।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত সোমবার তালা সদর ইউনিয়নের জেয়ালা নলতা গ্রামে লুৎফর নিকারীর (৬০) ছেলে সেলিম নিকারী তাদের নিজেদের ঘেরে মাছ ধরছিলেন। এ সময় পাশের সরদার মশিয়ার রহমানের ঘের থেকে তিনি মাছ চুরি করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। পরে মশিয়ার রহমানের ঘের কর্মচারী রনি ও কয়েকজন সেলিমকে মারধর করে মশিয়ার রহমানের কাছে নিয়ে যান। এ খবর পেয়ে সেলিমের বাবা লুৎফর নিকারী তার বাড়িতে যান।
এ সময় মশিয়ার রহমান, তালা সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি তুহিন ও ঘের কর্মচারী রনিসহ কয়েকজন লুৎফর নিকারী ও তার ছেলে সেলিমকে লাঠিসোটা দিয়ে বেপরোয়াভাবে মারধর করতে থাকেন। একপর্যায়ে লুৎফর নিকারীর গলায় গামছা পেঁচিয়ে তার শ্বাসরোধ করা হয়। কিছুক্ষণ পর তিনি জ্ঞান হারালে দুজনকেই তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে লুৎফর নিকারীকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এ ঘটনার পর মশিয়ার রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে তালা উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করে গ্রামবাসী। এ ছাড়া তালা থানার সামনে তালা-পাইকগাছা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে অবস্থান নেয় তারা।
এ ব্যাপারে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী রাসেল বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে আমরা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরকার মশিয়ার রহমানকে আটক করি। পরে তার বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত লুৎফর নিকারীর ছেলে সেলিম নিকারী। ওই মামলায় মশিয়ারকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
সান নিউজ / বি.এম.