নিজস্ব প্রতিবেদক:
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) তিন কিশোর হত্যাকাণ্ডে কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিভাগীয় তদন্ত কমিটি।
বুধবার (১৯ আগস্ট) দুই সদস্যের এই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) যুগ্ম সচিব সৈয়দ নুরুল বাসির বলেন, ‘শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোর হত্যাকাণ্ডে কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছি। আজকের কোনো এক সময় মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হবে। পরে মহাপরিচালক ওই প্রতিবেদন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।’
তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, ‘কেন্দ্রে নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা আছে। এসব অব্যবস্থাপনার নিরসন এবং কেন্দ্রের শিশু-কিশোরদের চিকিৎসাসেবায় সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসক নিযুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।’
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) যশোর জেনারেল হাসপাতালের ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে ‘হত্যাজনিত কারণেই’ তিন কিশোরের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
যশোরের পুলেরহাটে অবস্থিত শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী এক আনসার সদস্যকে মারধরের ঘটনায় ১৩ আগস্ট দুপুরে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৮ জন কিশোরকে পেটানো হয়। এতে তিন কিশোর নিহত ও অন্য ১৫ জন আহত হয়। নিহতরা হলো, বগুড়ার শিবগঞ্জের তালিবপুর পূর্বপাড়ার নান্নু পরমানিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭), একই জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৮) এবং খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮)।
এই ঘটনায় নিহত কিশোর রাব্বির বাবা রোকা মিয়া বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় কেন্দ্রের পাঁচ কর্মকর্তা ও অপর আট কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠিত যশোর জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বাধীন আরও একটি তদন্ত কমিটি মাঠে কাজ করছেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবুল লাইছের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ওই কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। বুধবার তদন্ত কমিটি আরো সাতদিন সময় চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছেন। ওই কমিটি বলছেন, মামলার আসামি যে পাঁচ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন, তদন্তের স্বার্থে তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদে আবেদন জানানো হলেও কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি আদালত। এ জন্য তদন্ত শেষ করতে আরো সাতদিনের সময় প্রয়োজন।
গ্রেপ্তারকৃত শিশু কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক (প্রবেশন অফিসার) মাসুম বিল্লাহ, ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর এ কে এম শাহানুর আলম এবং সাইকো সোশ্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান ও কারিগরি প্রশিক্ষক (ওয়েল্ডিং) ওমর ফারুককে ইতোমধ্যেই সাময়িক বরখাস্ত করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। আর গ্রেপ্তারকৃত কেন্দ্রের বন্দি আট কিশোর হলো, চুয়াডাঙ্গার আনিছ, গাইবান্ধার খালিদুর রহমান তুহিন, নাটারের হুমাইদ হোসেন ও মোহাম্মদ আলী, পাবনার ইমরান হোসেন ও মনোয়ার হোসেন, রাজশাহীর পলাশ ওরফে শিমুল ওরফে পলান এবং কুড়িগ্রামের রিফাত আহমেদ রিফাত। এই ঘটনার সাক্ষী কেন্দ্রটির পাঁচজন কিশোর আদালতে জবানবন্দি দিয়েও তিন কিশোর হত্যাকাণ্ডে কর্মকর্তা, আনসার সদস্য ও কিছু কিশোরকে দায়ী করেছে।
সান নিউজ/ আরএইচ/ এআর