নিজস্ব প্রতিবেদক:
যশোর: যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোর নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশের রিমান্ডে থাকা কেন্দ্রের পাঁচজনের মধ্যে অন্য চার কর্মকর্তাকেও সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। এদিকে গ্রেপ্তারকৃত ওই পাঁচ কর্মকর্তাকেই পুলিশের পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তর গঠিত দুই তদন্ত কমিটিও।
তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ গত ১৪ আগস্ট সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। সোমবার (১৭ আগস্ট) নতুন করে বরখাস্তকৃতরা হলেন, প্রবেশন অফিসার মাসুম বিল্লাহ, ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর এ কে এম শাহানুর আলম এবং সাইকো সোশ্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান ও কারিগরি প্রশিক্ষক (ওয়েল্ডিং) ওমর ফারুক।
সমাজসেবা অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক অসিত কুমার সাহা বলেন, 'মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আজ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। একজনকে আগেই বরখাস্ত করা হয়েছিল। বরখাস্ত হওয়া পাঁচ কর্মকর্তাই গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে রিমান্ডে আছেন।'
ওই ঘটনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর গঠিত দুই সদস্যের ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত বন্দি কিশোরদের সঙ্গে উভয় কমিটি কথা বলেছেন। এরপর পুলেরহাটস্থ শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অন্য বন্দিদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তদন্তে থাকা কর্মকর্তারা। এখন তদন্তের অংশ হিসেবে পাঁচ কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে উভয় কমিটির পক্ষ থেকে সোমবার আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, যারা এই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশের রিমান্ডে আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলতে চান দুই কমিটিরই সদস্যরা। এজন্য জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুদ্দিন হোসাইনের আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে। তবে এই আবেদনের কোনো আদেশ এখনো দেওয়া হয়নি। আসামিদের রিমান্ড শেষ হওয়ার পর আদালতে পাঠালে তারপর আবেদনের শুনানি হবে বলেও জানা গেছে।
গত ১৩ আগস্ট দুপুরে কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ও নির্দেশে আনসার সদস্য ও কয়েকজন কিশোর অন্তত ১৮ জন বন্দি কিশোরকে বেধড়ক মারপিট করেন। মারপিট ও নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের ফেলে রাখা হয়। কয়েকজন অচেতন থাকায় তারা অজ্ঞান হয়ে গেছে মনে করলেও পরে কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন, তারা মারা গেছে। এরপর সন্ধ্যার পর এক এক করে তিনজনের মরদেহ হাসপাতালে এনে রাখা হয়। আহত ১৫ জনকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নিহতরা হলো, বগুড়ার শিবগঞ্জের তালিবপুর পূর্বপাড়ার নান্নু পরমানিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭), একই জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৮) এবং খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮)।
এ ঘটনায় পরদিন ১৪ আগস্ট রাতে নিহত কিশোর পারভেজ হাসান রাব্বির বাবা রোকা মিয়া কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলাটি করেন। মামলায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষকে আসামি করা হয়।
গত শনিবার (১৫ আগস্ট) ওই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পর আদালতের নির্দেশে আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, মাসুম বিল্লাহ ও শাহানূর আলমকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। মুশফিকুর রহমান ও ওমর ফারুকের তিনদিনের রিমান্ড সোমবার শেষ হয়েছে। তারা রিমান্ডে পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে বলছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁচড়া ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক রোকিবুজ্জামান। অন্য তিনজনের রিমান্ড শেষ হবে বুধবার (১৯ আগস্ট)।
পাঁচ কর্মকর্তার পর তিন কিশোর খুনের মামলায় রোববার (১৬ আগস্ট) আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দি আট কিশোরকেও গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছে পুলিশ। তারা হলো, চুয়াডাঙ্গার আনিছ, গাইবান্ধার খালিদুর রহমান তুহিন, নাটারের হুমাইদ হোসেন ও মোহাম্মদ আলী, পাবনার ইমরান হোসেন ও মনোয়ার হোসেন, রাজশাহীর পলাশ ওরফে শিমুল ওরফে পলান এবং কুড়িগ্রামের রিফাত আহমেদ রিফাত। একইদিন এই ঘটনার সাক্ষী কেন্দ্রটির পাঁচজন কিশোর আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
সান নিউজ/ এআর