নিজস্ব প্রতিনিধি:
টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার প্রাথমিক তদন্তে সাক্ষীদের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য প্রমাণ পেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাব কর্মকর্তাদের দাবি, ঘটনার আগেই বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর সঙ্গে সাক্ষীদের যোগাযোগ হয়েছে। তারা হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও আগে থেকেই জানতো বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কারণেই তাদের গ্রেফতারের পর রিমান্ডে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা এলিট ফোর্স র্যাব। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া তিন স্বাক্ষীর মধ্যে একজন কমিউনিটি পুলিশের সদস্য। তিনি ঘটনার আগেই ফাঁড়ির ইনচার্জের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা হত্যার বিষয়ে আগে থেকেই জানতেন এবং হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এজন্য তাদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনা হয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’
র্যাব গত মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) মো. নুরুল আমিন, আয়াছ উদ্দিন ও নিজাম নামে তিন জনকে গ্রেফতার করে। যারা সিনহা রাশেদ খানেক গুলি করে হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী ছিল।
তবে সাক্ষী নুরুল আমিনের মা অভিযোগ করেছেন সোমবার বিকালে সাদা পোশাকে একদল লোক তার ছেলে এবং অপর দুই সাক্ষী আয়াছ ও নিজামের সঙ্গে কথা বলেছে। এক পর্যায়ে তারা তিন জনকেই কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার নুরুল আমীনের মা খালেদা বেগম টেকনাফ থানায় একটি অপহরণ মামলা (নম্বর- ১৯) দায়ের করে। এর একদিন পর র্যাবের পক্ষ থেকে এই তিন জনকে গ্রেফতারের কথা জানানো হয়। তিন সাক্ষীকেই আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
র্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এই মামলাটি র্যাব তদন্ত করছে। তদন্ত কর্মকর্তা মনে করেছেন এই মামলার তিন সাক্ষী মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। আসামিদের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের গ্রেফতার করেছে।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর যাদের সাক্ষী করা হয়েছে, তারা আসলে কী দেখেছে এবং ঘটনার সময় তাদের কার অবস্থান কোথায় ছিল, এটি জানার জন্য র্যাব কর্মকর্তারা গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। একই সঙ্গে সাক্ষীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তাদের সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু সাক্ষীদের কথাবার্তার মধ্যে বিভ্রান্তি ও পৃথক পৃথক তথ্য পাওয়া যায়। এ কারণে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
র্যাব সূত্র আরও জানায়, এই ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী হলো সিফাত। এছাড়া নিহত সেনা কর্মকর্তার সঙ্গী হিসেবে রিসোর্টে অবস্থানকারী শিপ্রাসহ অন্যদের সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা বক্তব্য রেকর্ড করা হবে। প্রাথমিকভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। সাক্ষীদের বয়ান আদালতেও রেকর্ড করা হবে। র্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, সাক্ষী ও অন্যান্য পারিপার্শিক তদন্ত শেষে মামলার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যাতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আসামিরা কোনও তথ্য এড়িয়ে যেতে না পারে।
র্যাব জানায়, সিনহা হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ফোনালাপ ও ভিডিও ফুটেজ বের হয়েছে, এর সবকিছুই আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনাটি তাৎক্ষণিক ঘটেছিলো, নাকি পূর্বপরিকল্পিত ছিল, তা জানার চেষ্টা চলছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গুলির ঘটনাটি ঘটলে সেখানে আসলে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো এবং পূর্বপরিকল্পিত হলে এই ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত এবং কী উদ্দেশ্যে তাকে হত্যা করা হয়েছে এর সবকিছুই খুঁজে বের করা হচ্ছে।