নিজস্ব প্রতিবেদক:
সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় কক্সবাজারের টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ তিন আসামির সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে বাকি চার আসামিকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন বিচারক।
আদালতের নির্দেশনা মতে, চার আসামির জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হলেও মূল অভিযুক্ত তিনজনকে গত তিনদিনেও রিমান্ডে নেয়া যায়নি। তাদের কেন রিমান্ডে নেয়া যায়নি, সে বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে চাননি তদন্তের দায়িত্বভার পাওয়া সংস্থার কেউ।
রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মামলার এক নম্বর আসামি বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী, দুই নম্বর আসামি টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তিন নম্বর আসামি পুলিশের সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত। তাদের প্রত্যেকের সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
পাশাপাশি পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন বিচারক।
এরই মধ্যে শনিবার (০৮ আগস্ট) আদালতের আদেশের কপি কারাগারে এসে পৌঁছায় বলে জানিয়েছেন জেল সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, নথিপত্র আসার পর র্যাব সদস্যরা চার আসামিকে জেলগেটে শনিবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। রোববার দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু অপর তিন আসামিকে এখনও রিমান্ডের জন্য ডাকা হয়নি। তারা কারাগারেই রয়েছেন।
রিমান্ডের আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে বিলম্বের কারণ জানতে কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর ইনচার্জ আজিম আহমেদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ফোনে তাকে না পেয়ে র্যাব-১৫ এর সেকেন্ড ইন কমান্ডার (টুআইসি) মেজর মেহেদী হাসানকেও ফোনে পাওয়া যায়নি। তাই আসামিদের রিমান্ড সম্পর্কে মামলার তদন্তকারী সংস্থার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
র্যাবের একটি সূত্র জানায়, তদন্ত কর্মকর্তা সুবিধামতো সময়ে আসামিদের রিমান্ডে নেবেন। স্পর্শকাতর মামলা বিধায় সবকিছু গুছিয়ে তারপরই আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে হয়তো। আবার ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশকিছু অডিও ক্লিপ ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। উঠে এসেছে নানা তথ্য। সেসব বিষয়ও খতিয়ে দেখছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা। সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে বিস্তারিত তথ্য বের করা হবে। এজন্য আসামিদের রিমান্ডে নিতে বিলম্ব হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার (০৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. হেলাল উদ্দিনের আদালতে আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন র্যাব-১৫ এর সেকেন্ড ইন কমান্ডার (টুআইসি) মেজর মেহেদী হাসান। শুনানি শেষে ১, ২ ও ৩ নম্বর আসামির সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর ও মামলার অন্য চার আসামিকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন বিচারক। একই সঙ্গে আত্মসমর্পণ না করা পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ফরিদুল আলম বলেন, গ্রেফতারের পর আদালতে আনা হলে জামিনের আবেদন করেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ সাত আসামি। শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কক্সবাজার কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাব-১৫ এর সেকেন্ড ইন কমান্ডার (টুআইসি) মেজর মেহেদী হাসান আসামিদের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে মামলার প্রধান আসামি লিয়াকত আলী, দ্বিতীয় আসামি ওসি প্রদীপ ও তৃতীয় আসামি এসআই নন্দলাল রক্ষিতের সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকি চার আসামি কনস্টেবল সাফানুর, কামাল, মামুন এবং এএসআই লিটন মিয়াকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন বিচারক। রাত সাড়ে ৮টায় আসামিদের কারাগারে নেয়া হয়।