নিজস্ব প্রতিনিধি:
২০১৯ সালের তিন ডিসেম্বর। কক্সবাজার আদালত পাড়া থেকে আব্দুল জলিল নামে এক সিএনজি চালককে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকে কিছু ব্যক্তি। একইদিনে নিরুদ্দেশ হন হ্নীলা ইউনিয়ন মৌলভী বাজার গ্রামের মৃত সুলতান আহাম্মদের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২০)। টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের পশ্চিম মহেশখালীয়া পাড়ার বাসিন্দা আবদুল জলিলের খোঁজে পাগলপ্রায় হয়ে যায় তার স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমসহ পুরো পরিবার। স্থানীয় পত্রিকায় ছাপানো হয় নিখোঁজ সংবাদ। তবে খোঁজ মিলছিল না কোনও। বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দফতরে খোঁজ নিয়েছিলেন ছেনুয়ারা বেগম। কিন্তু হদিস মিলছিল না।
এর দুই মাস পর এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হঠাৎ থানা থেকে ছাড়া পাওয়া এক স্থানীয় ব্যক্তির কাছে ছেনুয়ারা নিশ্চিত হন তার স্বামী রয়েছে ‘ওসির টিম’-এর কাছে। ওসির নাম প্রদীপ কুমার দাশ।
ভুক্তভোগী পরিবারটির দাবি, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে এরপর যোগাযোগ করলে প্রথমে স্বীকার করেননি তিনি। এরপর আব্দুল জলিলের বড় ভাই আব্দুর রশিদকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোমার ভাই বড় মাদক ব্যবসায়ী, যদি জীবিত চাও ৩০ লাখ টাকা নিয়ে আসো।’
তবে দাবি করা টাকা জোটাতে পারেনি আটক হওয়া আবদুল জলিলের পরিবার। এরপর গত ৭ জুলাই মঙ্গলবার ভোরে টেকনাফের মহেশখালী পাড়া এলাকায় কথিত ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন আবদুল জলিলসহ সাদ্দাম হোসেন।
কথিত এই বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের বিষয়ে টেকনাফ থানা পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মাদক উদ্ধারে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ইয়াবা কারবারিদের ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটে। মাদক কারবারিরা পুলিশকে লক্ষ করে গুলি ছুড়লে আত্মরক্ষার্থে পুলিশও গুলি ছোড়ে। এসময় দুই মাদক কারবারি নিহত হয় ও তাদের কাছ থেকে ৫ হাজার ইয়াবা, দুটি দেশীয় অস্ত্র, ৬ রাউন্ড তাজা কার্তুজ ও ৮ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।
তবে এতদিন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বা তার গঠন করা ‘ওসির টিমের’ বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস ছিল না ভুক্তভোগী পরিবারটির। ওসি প্রদীপ গ্রেফতার হওয়ার পর শনিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে নিহতের স্বজনরা এ ঘটনায় বিচারের আকুতি জানিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন।
তারা দাবি করেন, টানা আট মাস থানার ভেতরে বানানো টর্চার সেলে আব্দুল জলিলকে আটকে রেখে নির্যাতন করার পর গত ৭ জুলাই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এতদিন ধরে থানার ‘ওসির টিমের’ হাতে আটক করে রাখা হলেও তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি। তাকে আটকে রাখার কথা স্বীকারও করা হয়নি। গোপনে আটকে রেখে পরিবারের কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল। দিতে না পারায় তাকে ‘ক্রসফায়ারে’ দেওয়া হয়েছে। যদি অপরাধীও হয়, তাকে আটকে রেখে বিনা বিচারে এভাবে মেরে ফেলার অধিকার ওসিকে কে দিয়েছে?
কথিত ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত জলিলের স্ত্রী ছেনুয়ারা এসময় কান্নার জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘গত বছরের তিন ডিসেম্বর আমার স্বামীকে আটকের পর থানায় ৮ মাস টর্চার সেলে নির্যাতন শেষে চলতি বছরের ৭ জুলাই গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। আমার স্বামী এমন কী অপরাধ করেছিল, তাকে এমনভাবে গুলি করে মারতে হয়েছে?’
তিনি বলেন, তার স্বামী একজন সিএনজিচালক ছিলেন। দুই সন্তান নিয়ে স্বল্প আয় নিয়ে তাদের সংসার ছিল সুখের। এর মধ্যে সংসারের আয় বাড়াতে বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। কিন্তু বিদেশ পাড়ি দেওয়ার সুযোগ হয়নি তার।
ছেনুয়ারা জানান, ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর কক্সবাজার আদালত পাড়া থেকে তার স্বামীকে আটক করে। সেই খবর পাওয়ার পর পরই স্বামীর সন্ধানে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দফতরে খোঁজ নিয়ে লাভ হয়নি। দুই মাস পেরিয়ে হঠাৎ থানা থেকে ছাড়া পাওয়া এক স্থানীয়ের কাছে নিশ্চিত হতে পারি ‘ওসির টিম’র কাছে তার স্বামী রয়েছে। স্বামীকে ছাড়াতে তাদের কাছে কান্নাকাটি করে কোনও লাভ হয়নি। এমনকি স্বামীর নিখোঁজের সংবাদ স্থানীয় পত্রিকায় ছাপাও হয়েছে। প্রায় ৮ মাস পর পুলিশ মাদক ব্যবসায়ী বলে স্বামীকে ‘ক্রসফায়ার’ দেখিয়ে হত্যা করে। আমার স্বামী একদিনের জন্যও মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিলেন না। আমি এই হত্যা কান্ডের বিচার চেয়ে ওসির সহযোগীদের কঠোর শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।
নিহত জলিলের বড় ভাই আব্দুর রশিদ বলেন, ‘দীর্ঘ পাঁচ মাস আগে তার ভাইয়ের খবর নিতে থানা পুলিশের কাছে যান। এসময় ওসি প্রদীপ হুমকি দিয়ে বলে তোমার ভাই বড় মাদক ব্যবসায়ী, যদি জীবিত চাও ৩০ লাখ টাকা নিয়ে আসো। তখন ওসি সাহেবকে বলেছি এত টাকা আমরা কোথায় পাবো স্যার। আমরা গরিব মানুষ, আমার ভাই কোনোদিন মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিল না, সে সিএনজি চালিয়ে সংসার চালায়। কিন্তু ওসি কোনও কথা শোনেননি। দীর্ঘ ৮ মাস নির্যাতনের পর ৭ জুলাই পুলিশ ‘ক্রসফায়ার’ দেয় আমার ভাইকে।
এই সীমান্তে মাদক উদ্ধারের নামে এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অহরহ। গত ২২ মাসে এভাবে শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে ‘ওসির টিম।’
আরেক ভুক্তভোগী টেকনাফের পুরান পল্লান পাড়ার বেলুজা ও আমিনা খাতুন বলেন, ‘৫ জুলাই দিন দুপুরে টেকনাফ থানা পুলিশের এএসআই নাজিমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘরে ঢুকে আমিসহ ঘরের লোকজনকে ব্যাপক মারধর করে। এরপর আলমিরা ভেঙে দুই ভরি স্বর্ণ, দেড় লাখ টাকা ও জায়গা জমির কাগজ পত্র লুট করে। এসময় তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে টেনেহিঁচড়ে পরিবার সদস্য কবির আহমদসহ তাদেরকে থানায় নিয়ে ব্যাপক মারধর করে।
তারা আরও বলেন, ‘এরপর তাদের ছেড়ে দেওয়ার নামে নগদ দুই লাখ টাকা ঘুষ নেয় পুলিশ অফিসার নাজিম। তবে ১শ’ পিস করে ইয়াবা দিয়ে কারাগারে চালান দেয়। দেড় মাস কারাভোগ শেষে আমরা দুজন জামিনে বেরিয়ে আসলেও এখনও কারাভোগ করছে পরিবারের আরেক সদস্য কবির। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে সরকারের কাছে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
এই এএসআই নাজিম ‘ওসির টিম’ এর সদস্য কিনা জানা যায়নি। প্রসঙ্গত টেকনাফ থানায় ওসি (অপারেশন) পদে ছিলেন প্রদীপ কুমার দাশ। তার নেতৃত্বাধীন টিমটিকে ‘ওসির টিম’ বলা হতো। এই টিমে থানার কয়েকজন কর্মকর্তাসহ পুরো থানা এলাকাজুড়ে অনেক সোর্স জড়িত রয়েছেন। থানায় এছাড়াও ওসি (তদন্ত) বলে আরেকজন ওসি দায়িত্বরত আছেন। তার টিমের বিরুদ্ধেও আছে নানা অভিযোগ। তবে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার নেতৃত্বাধীন ওসির টিমের বিরুদ্ধেই সাধারণ মানুষের অভিযোগ বেশি। এই টিমের নেতৃত্বে থানার তিন তলায় ‘টর্চার সেল’ পরিচালনার অভিযোগও করেছেন অনেক ভুক্তভোগী।
এমনই একজন ভুক্তভোগী ফরিদা বেগম ওরফে কাজল। এ বছরের শুরুতে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে এই নারীসহ তার ভাই আবদুর রহমান এবং স্বামী আবদুল কাদেরকে আটক করেছিলেন ওসি প্রদীপ কুমার দাস। দুই দিন থানায় আটকে রেখে নির্যাতনের পর ফরিদা বেগম ওরফে কাজলকে ইয়াবা দিয়ে কোর্টে চালান দেওয়া হয়। তবে বাঁচতে পারেননি কাজলের ভাই আবদুর রহমান এবং কাজলের স্বামী আবদুর কাদের। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পড়েও কথিত ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন তারা।
এ প্রসঙ্গে ফরিদা বেগম ওরফে কাজল বলেন, ‘ঘর থেকে আমাদের তিনজনকে জোর করে ধরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থানা ভবনে তিনতলায় একটি কক্ষে আলাদা করে আমাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়। এসময় আমাকে চোখ মুখ বেঁধে মারধর করে। এতে মুমূর্ষু হয়ে পড়ি। এরপরের দিন ৩শ’ পিস ইয়াবা দিয়ে কক্সবাজার কারাগারে পাঠায়। এসময় আমার গলায় থাকা একটি স্বর্ণের চেইন ছিল সেটি থানার কম্পিউটার অপারেটর রাজু জোর করে নিয়ে নেয়। তখনও জানা ছিল না আমার ভাই আবদুর রহমান এবং স্বামী আবদুর কাদের এর পরিণতি কী হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরের দিন জানতে পারলাম তারা দুইজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। শুনে আমার হাত-পা অবশ হয়ে পড়ে। ভাই মিস্ত্রি ও স্বামী সিএনজিচালক ছিলেন। কী এমন দোষ ছিল তাদের গুলি করে মারা হয়েছে? আমাদের থাকার মতো একটি ঘরও ছিল না। আমরা কেমন করে ওসির জন্য লাখ লাখ টাকা ঘুষ দেবো?’
তিনি স্পষ্টভাবে বলেন,‘এইখানে এমন বর্বরতাই চলছিল ওসি প্রদীপের আমলে।’
এদিকে টেকনাফের স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিশ্বস্ত দুটি টিমের মাধ্যমে ওসি প্রদীপ তার সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। প্রদীপের টিমের নাম ছিল 'ওসির টিম'। টিমের সদস্যদের দিয়ে প্রদীপ তার নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেন। প্রদীপের বিশেষ টিমে ছিলেন এএসআই সজিব দত্ত ওরফে সঞ্জিত, মিঠুন ভৌমিক, কনস্টেবল সাগর দে, নামজুল ও রাজু মজুমদার। আরও ছিলেন এসআই সুজিত, এসআই মশিউর, এসআই কামরুজ্জামান, এএসআই আমির, রাম, কাজী মোহাম্মদ সাইফ এবং কনস্টেবল রুবেল, মিথুন ও শরিফুল। এসব পুলিশ কর্মকর্তারা লোকজনকে আটক করে রাতে থানার তিন তলায় টর্চার সেলে নিয়ে যেতেন। এই টর্চার সেলে নিয়ে দাবি করা টাকা না পেলে অনেককে মেরিন ড্রাইভে নিয়ে ‘ক্রসফায়ার’ দেওয়ার হুমকি দিতেন।
বিশেষ করে সঞ্জিত, মিঠুন ভৌমিক ও সাগরদের দায়িত্ব ছিল টাকা আদায় না হলে লোকজনদের ধরে এনে মারধর করে ইয়াবা, অস্ত্র ও গুলি সামনে রেখে দিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করা। এরপর আরও অনেকের নাম তাদের মুখ থেকে বের করতেন তারা। পরে সেসব ব্যক্তিকে টার্গেট করত পুলিশ। তাদের হাতে টেকনাফের শত শত নিরীহ মানুষ নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগীরা এখন এসব নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
পুলিশ জানায়, ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর ওসি প্রদীপ টেকনাফে যোগদান করেন। সেসময় থেকে চলতি বছরের ২৫ জুলাই পর্যন্ত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। তার মধ্যে রোহিঙ্গা ছিল ৩৭ জন। এসব ঘটনায় ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৮০ পিস ইয়াবা ও পিস্তল ৮টি, এলজি ৪০৮টি এবং ১৪শ’টি গুলি উদ্ধারের দাবি করেছে পুলিশ।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, মূলত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীর ট্যাগ লাগিয়ে নিরীহ লোকজনকে থানায় ধরে নিয়ে মোটা অংকের অর্থের জন্য চাপ প্রয়োগ করতো ‘ওসির টিম’। যারা টাকা দিতে পারতো না তাদের ‘ক্রসফায়ার’ দেওয়া হতো।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, ‘প্রদীপ ও তার সঙ্গীরা থানায় তাদের টর্চার সেল বানিয়েছিলেন। তারা যাদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো টাকা আদায় করতে পারতেন না তদের টর্চার সেল থেকে ক্রসফায়ার দিতে মেরিনড্রাইভ নিয়ে যেতেন। এমন ঘটনা টেকনাফে অহরহ।’
তবে থানার ভেতরে তিন তলায় ‘টর্চার সেল’ করে নির্যাতন আর থানার সব কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ‘ওসির টিম’ গঠন করার বিষয়ে থানা কর্তৃপক্ষের কেউ মুখ খোলেননি। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের কয়েকজন ওসির সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলার আসামি আর বাকিরা কারও ফোন ধরছেন না।
প্রসঙ্গত: গত ৩১ জুলাই ঈদের আগের রাতে টেকনাফের একটি পুলিশ চেকপোস্টে পরিচয় দেওয়ার পরেও মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সেনাবাহিনী ও পুলিশবাহিনীর মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে টানাপড়েনের সৃষ্টি হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি উচ্চ পযায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। নিহত মেজরের মাকে সান্ত্বনা দিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সেনাপ্রধান ও পুলিশের মহাপরিচালক একত্রে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে দায়ীদের আইন অনুযায়ী বিচারের কথা বলেন।
নিহত মেজরের বোন আদালতে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করলে আদালত টেকনাফ থানাকে মামলা গ্রহণের আদেশ দেন। মামলা হওয়ার আগেই থানা থেকে ওসি প্রদীপকে প্রত্যাহার করা হয়। এর পরদিন ওসিসহ ৭ আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাদের জামিন না মঞ্জুর হয়। আদালত ওসিসহ তিন জনের ৭ দিনের রিমান্ড এবং গ্রেফতার বাকি চার জনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। পলাতক বাকি দুজনকেও আত্মসমর্পণ না করলে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ হত্যা মামলায় গ্রেফতার সাত পুলিশ সদস্যকে শুক্রবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন প্রত্যাহার হওয়া ওসি প্রদীপ, সিনহাকে গুলি করা হত্যাকারী পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক নন্দ দুলাল রক্ষিত, সহকারী উপপরিদর্শক লিটন মিয়া এবং কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন।
ওসি প্রদীপ গ্রেফতার হওয়ার পরই তার অত্যাচারের বিষয়ে এখন টেকনাফের সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছে। অপরাধ করলেও তাদের কাছে ঘুষ আদায় ও বিনা বিচারে তাদের ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা করা নিয়েই ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অভিযোগ। গত তিনদিনে ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন বেশ কিছু ভুক্তভোগী। এদের কেউ কেউ মামলা করারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।