নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহার হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৩ আসামির ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এছাড়া বাকি চার আসামিকে দুদিন করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওসি প্রদীপসহ সাত আসামির জামিন নামঞ্জুরের পর তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে একই আদালতে আবেদন করেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) নিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মোস্তফা।শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) রাত সাড়ে আটটার দিকে এ রায় দেন।
রিমান্ডপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি হচ্ছেন বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে প্রত্যাহারকৃত পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দলাল রক্ষিত। মামলার বাকি চার আসামি কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়াকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। এ মামলায় অভিযুক্ত এসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোস্তফা এখনও আদালতে আত্মসমপর্ণ করেনি।
এদিকে রাজধানীতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রিমান্ডে আমরা মূলত সত্য অনুসন্ধান করবো। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে আমরা চেষ্টা করবো যে হত্যাকাণ্ডটি হয়েছে এর পেছনে মোটিভ কী ছিল এবং এই হত্যাকাণ্ডের জন্যে প্রকৃতপক্ষে দোষী কারা? এবং সেই সঙ্গে মূলত কারা কারা সম্পৃক্ত ছিল সেই বিষয়গুলো উদ্ঘাটন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, থানা থেকে প্রত্যাহারের বিষয়টি টের পেয়ে গত মঙ্গলবার সকালে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস জিডি নোটে নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়ে থানা থেকে বের হয়ে যান। এর একদিন পর বুধবার তাকে টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহার করে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছিল। ওই দিনই তিনি চট্টগ্রামের বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকেই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। তবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রদীপ কুমার দাস আত্মসমপর্ণ করতে চাইলে আমরা তাকে পুলিশ প্রহরায় কক্সবাজার আদালতে পৌঁছে দিয়েছি।
প্রসঙ্গত: গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে বাদানুবাদের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন ও নিরাপত্তা বিভাগ। এঘটনায় তদন্তের স্বার্থে টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীসহ ১৬ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
একই ঘটনায় ৫ আগস্ট দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন মেজর সিনহার বড়বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। আদালতের নির্দেশে টেকনাফ থানায় মামলাটি রুজু হয়। দণ্ডবিধি ৩০২, ২০১ ও ৩৪ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফ থানায় মামলাটি রুজু করা হয়। একইদিনে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ মামলার প্রধান আসামি হওয়ায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ওসি প্রদীপ চিকিৎসা নিতে এলে সেখানে তাকে মামলায় আত্মসমর্পণের পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি রাজি হওয়ায় তাকে পাহারা দিয়ে কক্সবাজারের আদালতে হাজির করা হয়।
এর আগে এ ঘটনা নিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে নানা ধরনের উত্তেজনা ও গুজব রটনা এবং বিভিন্ন মহলের উসকানির প্রেক্ষাপটে গতকাল বুধবার (৫ আগস্ট) সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ একত্রে টেকনাফের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা হিসেবে উভয়ে উল্লেখ করেন। এ ঘটনা সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর বিরাজমান সম্পর্কে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলেও তারা আশ্বস্ত করেন। একইসঙ্গে বিষয়টি আদালতে মীমাংসা হবে উভয়ে এই অভিমত দিয়ে এই ইস্যুতে কোনও মহলকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার না করারও আহ্বান জানান তারা।
প্রসঙ্গত: সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবারকে এ ঘটনার সুষ্ঠুবিচার হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।