নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রতারণা করে যতো আয় করতেন, সেই অনুপাতে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের সম্পদ মিলছে না দেশে। তার অবৈধ আয়ের অর্থ বেশিরভাগই পাচার হয়েছে বলে ধারণা র্যাবের। সাহেদের অর্থপাচারের বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) চিঠি দেয় র্যাব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে সাহেদের অর্থপাচারের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার পর অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডি।
র্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতারণা করে আয়ের অর্থ দিয়ে সাহেদ দেশের ভেতরে সম্পদ গড়েনি। বেশিরভাগই দেশের বাইরে পাচার করেছে। সে চারটি দেশে বেশি ভ্রমণ করেছে। এসব দেশের যেকোনোটিতে অর্থপাচার করে থাকতে পারে বলে র্যাব ধারণা করছে।
ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে সাহেদ বহুবার যাতায়াত করেছেন। এসব দেশের মধ্যে যেকোনো দুটি দেশে সাহেদ বেশিরভাগ অর্থ পাচার করেছেন বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। সাহেদ তার অর্থপাচারের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য দিতেও শুরু করেছেন।
সাহেদ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার করেছেন বলেও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছেন। তবে অর্থপাচারের অনুসন্ধান সম্পন্ন হওয়ার পর এসব বিষয়ে আরে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
সিআইডি জানায়, সাহেদের অর্থপাচারের বিষয়টির প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে। বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে সিআইডি কাজ করছে বলে গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
সংস্থাটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা প্রতিটি বিষয় অনুসন্ধান করে দেখবো। সাহেদের জ্ঞাতবহির্ভূত আয় এবং তার ব্যবহার কীভাবে হয়েছে সবকিছুই আমাদের তদন্তের অংশ হবে। অর্থপাচার অনুসন্ধানের বিষয়টি অত্যন্ত বড় একটি তদন্ত কার্যক্রম। এটি নিয়ে এতো দ্রুত উপসংহারে আসা যাবে না। আমাদের কাজ চলছে।’
গত ৬ জুলাই র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। পরীক্ষা ছাড়াই করোনার সনদ দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিল তারা। র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অন্তত ছয় হাজার ভুয়া করোনা পরীক্ষার সনদ পাওয়ার প্রমাণ পায়। একদিন পর গত ৭ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে র্যাব রিজেন্ট হাসপাতাল ও তার মূল কার্যালয় সিলগালা করে দেয়। রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে ওই দিনই উত্তরা পশ্চিম থানায় নিয়মিত মামলা করা হয়। এরপর থেকে সাহেদ পলাতক ছিলেন। ১৬ জুলাই সাহেদকে সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
সাহেদের মূলত কোনো প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা ছিল না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার কোনো ভালো ও পরিচ্ছন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুঁজে পায়নি। সব প্রতিষ্ঠান জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ছিল। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই জালিয়াতির তথ্য পেয়েছে র্যাব। ভুক্তভোগীরা র্যাবের কাছে এসে অভিযোগ করছেন।
র্যাবের জনংসযোগ ও আইন শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা তার পাসপোর্টে চারটি দেশে যাওয়ার তথ্য পেয়েছি, যেগুলোতে তিনি একাধিকবার গিয়েছেন। সাহেদ দেশে কোনো সম্পদ করতে আগ্রহী ছিলেন না। তাই আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অর্থপাচার হয়ে থাকতে পারে। আমরা বিষয়টি সিআইডিকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। অর্থপাচারের বিষয়টি তারাই তদন্ত করবে।’
সান নিউজ/ এআর